মোহাম্মদপুরে নৃশংস জোড়া খুন
মা-মেয়ে হত্যায় গৃহকর্মীর পরিচয় সনাক্ত, গ্রেফতার এখনও অধরা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বহুতল ভবনে মা–মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া সন্দেহভাজন গৃহকর্মী ‘আয়েশা’-এর প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চার দিন আগে পরিচয় পরিবর্তন করে গৃহকর্মীর কাজ নেয়া এ তরুণীর আসল নাম-পরিচয় এবং স্বামীর তথ্য নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তরুণীর পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে গ্রেফতারের পর। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসবে এ দুই হত্যার প্রকৃত কারণ এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য সহযোগীদের তথ্য।
গত সোমবার সকালে ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পরদিন নাটোরে মা–মেয়ের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। মামলার এজাহারে বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী খোয়া যাওয়ার তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যার পর নাফিসার স্কুলড্রেস পরে একজন নারী কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ভবন ছাড়ছেন। এ নারীই ‘আয়েশা’ বলে দাবি স্বজনদের। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক।
তদন্ত সূত্র বলছে, গৃহকর্মী বাসার কাজে যোগ দেন ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে এবং নিজের ফোন ব্যবহার করেননি। ঘটনার পর বাসা থেকে নেয়া ফোনটি বেরিয়েই বন্ধ করে দেন তিনি। আশপাশের বেশ কিছু সিসিটিভি অচল থাকায় তার পালানোর পথ চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
লায়লা আফরোজের পরিবারের সঙ্গে তার পূর্ব কোনও ফোনযোগাযোগও পাওয়া যায়নি। সবসময় বোরকা পরে চলাফেরা করায় ভবনের ক্যামেরাতেও তার মুখ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েনি। ফলে তাকে শনাক্ত করতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পুলিশের সময় লেগেছে বলে জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানান, ভুয়া তথ্য দেয়ায় শুরুতে গৃহকর্মীকে শনাক্ত করা কঠিন ছিল। তবে খুব দ্রুতই তার আসল পরিচয় পাওয়া গেছে এবং তাকে ধরতে পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
হত্যার ঘটনায় নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এজাহার অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে ঘরে ঢুকে দেখেন স্ত্রী ও মেয়ের নিথর দেহ।
সিসিটিভি অনুযায়ী, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় তিনি বাসার মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যান।
সুরতহাল অনুযায়ী, লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার দেহে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার কারণ এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, আর সন্দেহভাজন গৃহকর্মী বারবার স্থান পরিবর্তনের কারণে তাকে গ্রেফতার এখন পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবার দেশ/কেএম




























