প্রতীক্ষার ডাকসু নির্বাচন জুলাইয়ে তফসিল, আগস্টের প্রথমার্ধে ভোট!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আগামী জুলাই মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ তফসিল। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগস্টের প্রথমার্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ডাকসু নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে যাতে আগামী ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যেই ভোটার তালিকা প্রকাশসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা যায়।
ক্যাম্পাসে জমে উঠেছে ছাত্র রাজনীতির সমীকরণ
ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা সামনে রেখে ছাত্রসংগঠনগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের দলীয় প্যানেল গোছানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের আড্ডা, ক্যাম্পাসের আঙ্গিনা, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল—সবখানে এখন আলোচনার কেন্দ্রে ডাকসু নির্বাচন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম উঠে আসছে বারবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন জনপ্রিয় ও দক্ষ নেতাদের নিয়ে প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আদর্শগতভাবে কাছাকাছি অবস্থানকারী ছাত্রসংগঠনগুলো যৌথ প্যানেল গঠনের জন্যও আলোচনা চালাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী, যারা কোনো সংগঠনের আনুষ্ঠানিক পদে নেই, কিন্তু নানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের ছাপ
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন এসেছে। উপাচার্যসহ বেশিরভাগ পদে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারও শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত মাসে গঠিত হয় দশ সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সময় যেসব অনিয়ম, সহিংসতা ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিলো, তা যেন এবার না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মত প্রকাশ এবং রাজনীতির চর্চা করতে পারছে, যা ইতিবাচক। নিরাপত্তা বলয় জোরদার করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আশা-আশঙ্কার মিশেল
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন নতুন আশার জন্ম হয়েছে, তেমনি আশঙ্কাও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকাণ্ড, ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণসহ কয়েকটি ঘটনার কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন। তবে প্রশাসনের আশ্বাস, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণের ডাকসু নির্বাচনে ভোটের উৎসবে মেতে উঠবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এখন অপেক্ষায় পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণার।
সবার দেশ/এফএস




























