মেক্সিকোতে ফেমিসাইড আতঙ্কে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া
লাইভ চলাকালীন টিকটকারকে গুলি করে হত্যা

মেক্সিকোর জালিস্কো রাজ্যের জাপোপানে টিকটকে সরাসরি সম্প্রচারের (লাইভস্ট্রিম) সময় এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন জনপ্রিয় বিউটি ইনফ্লুয়েন্সার ভ্যালেরিয়া মার্কেজ।
২৩ বছর বয়সী এ তরুণী স্থানীয় একটি বিউটি সেলুনে কাজ করতেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় উপস্থিতির জন্য পরিচিত ছিলেন। মঙ্গলবার, ১৩ মে তিনি তার কর্মস্থল থেকেই টিকটকে লাইভে এসেছিলেন। এ সময়ই ঘটে ভয়াবহ এ ঘটনা।
লাইভের মধ্যেই মৃত্যু
টিকটক লাইভে দেখা যায়, মার্কেজ একটি ছোট পার্সেল গ্রহণ করেন। সেটি খুলে ভেতর থেকে একটি ‘পিগি ডল’ বের করেন এবং তা অনুসারীদের দেখান। তখন পর্যন্ত দৃশ্য ছিল একদম স্বাভাবিক। এরপর হঠাৎ আরেক ব্যক্তি সেলুনে প্রবেশ করে। লাইভ চলাকালীনই সে ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনটি তুলে নেয়। ভিডিওতে তার মুখ আংশিক দৃশ্যমান হয়। এরপরই লাইভ বন্ধ হয়ে যায় এবং ধারণা করা হচ্ছে, ওই মুহূর্তেই মার্কেজকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ: নারীঘটিত সহিংসতা
জালিস্কো রাজ্যের প্রসিকিউটরের দপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এটিকে ফেমিসাইড হিসেবে দেখা হচ্ছে—অর্থাৎ কোনো নারীকে শুধুমাত্র তার নারী পরিচয়ের কারণে হত্যা। এ শব্দটি মেক্সিকোতে বহুল ব্যবহৃত, কারণ দেশটিতে নারীদের প্রতি সহিংসতা একটি দীর্ঘমেয়াদী ও ভয়াবহ সংকট হিসেবে বিবেচিত।
মেক্সিকোতে ফেমিসাইড: ভয়াবহ বাস্তবতা
মেক্সিকোতে নারী হত্যা বা ফেমিসাইড কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সে বছর নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ফেমিসাইড হিসেবে নথিভুক্ত হয়। দেশের ৩২টি রাজ্যেই নিয়মিতভাবে এমন অভিযোগ জমা পড়ছে।
সম্প্রতি ভেরাক্রুজ রাজ্যে মেয়র পদপ্রার্থী এক নারীকে লাইভস্ট্রিমের মাঝখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হন। ফলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এখন শুধু বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সংকট।
সামাজিক মাধ্যমে শোক
ভ্যালেরিয়া মার্কেজের টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে তার বিশাল অনুসারী ছিল—টিকটকে প্রায় ১ লাখ এবং ইনস্টাগ্রামে সমপরিমাণ। তার অনুসারীরা এমন নির্মম মৃত্যুতে স্তব্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা জানিয়েছেন, তারা কখনও ভাবেননি লাইভস্ট্রিমিংয়ের মতো এক আনন্দঘন মুহূর্ত এত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
তদন্ত ও নিরাপত্তা প্রশ্ন
হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় প্রশাসন সিসিটিভি ফুটেজ ও টিকটক লাইভের ভিডিও বিশ্লেষণ শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তদন্তে উঠে আসছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
এ ঘটনার পর নারী নিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সারদের সুরক্ষা, এবং মেক্সিকোতে সহিংসতার রাজনীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র কতটা ব্যর্থ, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
ভ্যালেরিয়া মার্কেজের মৃত্যু শুধু একটি মর্মান্তিক ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি গোটা মেক্সিকোর জন্য এক গভীর বার্তা—একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার, যেখানে নারীরা এখনও প্রকাশ্যে, লাইভ সম্প্রচারের মধ্যেও নিরাপদ নন। সোশ্যাল মিডিয়ার ঝলমলে আলোর নিচে চাপা পড়ে থাকা এ অন্ধকার যেন আরেকবার সামনে এসে দাঁড়াল।
সবার দেশ/কেএম