Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১২:৫০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনের আগমুহূর্তে জান্তার সর্বাত্মক দমন অভিযান

মিয়ানমারে হাসপাতালে বিমান হামলায় নিহত ৩১

মিয়ানমারে হাসপাতালে বিমান হামলায় নিহত ৩১
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে গৃহযুদ্ধের উত্তাপ নতুন করে তীব্র হয়েছে। বিদ্রোহী দখলকৃত এলাকায় আধিপত্য পুনর্গঠনের চেষ্টায় সামরিক সরকার এখন হাসপাতাল পর্যন্ত ছাড়ছে না—এমন অভিযোগই তুলছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। 

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাখাইনের ঐতিহাসিক ম্রাউক-ইউ শহরের একটি হাসপাতালে বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করে জান্তা বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ৬৮ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা ত্রাণকর্মী ওয়াই হুন আউং জানান, হামলার দৃশ্য ছিলো হৃদয়বিদারক। হাসপাতালের ওয়ার্ড, করিডোর আর বারান্দা—সবখানেই পড়ে ছিলো রক্তাক্ত লাশ। মধ্যরাতেই হাসপাতালের বাইরে অন্তত ২০টি মরদেহ সারিবদ্ধভাবে ঢেকে রাখা হয়। ধ্বংসস্তূপের ভেতর আরও লাশ আটকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমার কার্যত পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। প্রতি বছরই বিমান হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে জান্তা সরকার। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে দশ বছরের গণতান্ত্রিক যাত্রা থেমে যায়, তার পর থেকেই দেশটি চারদিকে বিদ্রোহী-জান্তা সংঘাতে জর্জরিত। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে—২৮ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাদের দাবি, এ নির্বাচনই দেশকে ‘সংঘাতমুক্ত ভবিষ্যতের পথে’ নিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন; বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কোনো ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়।

এ পটভূমিতেই রাখাইনে আরাকান আর্মির প্রভাব বৃদ্ধি সেনা সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। অং সান সু চির সরকারের আমল থেকেই সক্রিয় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্তমানে ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো উল্লেখ করছে। আরাকান আর্মির স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি—রাত ৯টার দিকে শুরু হওয়া হামলায় হাসপাতালে থাকা কমপক্ষে ১০ জন রোগী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

রাখাইন ভূগোলগতভাবে অত্যন্ত কৌশলগত। একদিকে বঙ্গোপসাগর, অন্যদিকে পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চল—যা সামরিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নির্বাচনের আগে এই অঞ্চল পুনর্দখলে সচেষ্ট হয়েছে জান্তা, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

তবে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর অতীতে তারা সহিংসতা চালিয়েছে বলে নানা আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মানবিক পরিস্থিতি রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ। সেনাবাহিনীর অবরোধ, খাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি—সব মিলিয়ে অঞ্চলটি ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত আগস্টে সতর্ক করে জানিয়েছিল—ক্ষুধা ও অপুষ্টি সেখানে নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে এবং পুরো প্রদেশ এখন মারাত্মক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে।

হাসপাতালের ওপর বোমা ফেলার মতো ঘটনা পরিস্থিতিকে যে চরম দিকেই ঠেলে দিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আন্তর্জাতিক মহল এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে, যদিও জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

হাদির হামলাকারীদের ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার
দিল্লির আধিপত্য ঠেকাতে ঐক্যের ডাক
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত -এনসিপির বৈঠক
জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান
হাদিকে গুলি করা ফয়সাল যেভাবে জামিন পেলেন
হাদির হামলাকারীর ছবি প্রকাশ, তথ্যদাতাকে পুরস্কারের ঘোষণা
বাংলাদেশি নাবিকসহ তেলবাহী ট্যাঙ্কার আটক করলো ইরান
কেরানীগঞ্জে বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন, ৪৫ জন উদ্ধার
শ্বাস নিতে পারছেন হাদি, জানালেন ফাহিম ফারুকী
হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা শনাক্ত, গ্রেফতারের প্রস্তুতি
হাদির দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’
হাদির ব্রেইন স্টেমে ‘ম্যাসিভ ইনজুরি’, সংকটময় ৭২ ঘণ্টা
হাদিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটলেন তিন উপদেষ্টা