চবির সমাবর্তনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
নোবেল পাবো ভাবিনি, কাজ করে গেছি
ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার—এ কথাটি যখন বলেছিলাম, অনেকে হাসাহাসি করেছিলো। আমি তখনও বলেছিলাম, আমরা দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবো। তখন তারা বলেছিলো, এটা তো সরকারের কাজ। আমি বলেছিলাম, আমি আমার কাজ করে যাবো—সরকার যদি বাধা দেয়, তাও দেখা যাবে।

‘কোনোদিন ভাবিনি নোবেল পুরস্কার পাবো। আমি কেবল আমার কাজ করে গেছি।’—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত ৫ম সমাবর্তনে এমন মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ড. ইউনূস বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো এখান থেকেই। ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার—এ কথাটি যখন বলেছিলাম, অনেকে হাসাহাসি করেছিলো। আমি তখনও বলেছিলাম, আমরা দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবো। তখন তারা বলেছিলো, এটা তো সরকারের কাজ। আমি বলেছিলাম, আমি আমার কাজ করে যাবো—সরকার যদি বাধা দেয়, তাও দেখা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের গড়ন পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে। কিন্তু গৎবাঁধা পথে চলার কারণে আমরা সে পরিবর্তনের চিন্তা করি না।
ড. ইউনূস বলেন, আমি এখানে শিক্ষক হিসেবে এসেছিলাম, কিন্তু দিন শেষে ছাত্র হয়ে গেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গর্ব করতে পারে দুটি নোবেল পাওয়ার জন্য। একদিকে, আমি শিক্ষক থাকা অবস্থায় নোবেল পেয়েছি। অন্যদিকে, যে গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে মডেল হিসেবে কাজ করছে, তার জন্মও চবি অর্থনীতি বিভাগে। আইনেও তা লেখা আছে।
ডিলিট পেলেন ড. ইউনূস, ২২ হাজার গ্র্যাজুয়েটের মিলনমেলা
অনুষ্ঠানে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে ড. ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক ডিগ্রি ‘ডি.লিট’ প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে ৪২ জনকে পিএইচডি এবং ৩৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক এবং বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এছাড়াও চবির প্রো-ভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ২২ হাজার গ্র্যাজুয়েটের অংশগ্রহণ
দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত এ সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মোট ২২ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েট ও তাদের পরিবারের অংশগ্রহণে পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উৎসবমুখর পরিবেশে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সবার দেশ/কেএম