Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৮ মে ২০২৫

হারুন উর রশীদ স্বপনের (ডয়চে ভেলে) অনুসরণে

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সিদ্ধান্তের সীমা’ নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সিদ্ধান্তের সীমা’ নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতি ও কাঠামোগত সংস্কারের বাইরে গিয়ে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন—এ সরকারের কার্যপরিধি আসলে কতদূর?

একক সিদ্ধান্তের অভিযোগ

যদিও সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য তৈরির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে সরকার, তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত—যেমন রাখাইনে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় বিদেশি ব্যবস্থাপনা, কাতারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কারখানা স্থাপনে চুক্তি এবং আইএমএফ ঋণের শর্তে এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার—এসব সিদ্ধান্তগুলো এককভাবে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ইস্যুগুলো ঘিরে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে কিছু রাজনৈতিক দল। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন সংক্রান্ত বিডার এক আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিএনপি, তাদের মতে—এটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের পরিধির বাইরে পড়ে।

সামরিক কারখানা ও সেন্ট মার্টিন প্রশ্ন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক কাতার সফরে সেখানে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ আহ্বান এবং এ লক্ষ্যে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার ঘোষণা রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর আগেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভবিষ্যৎ ও ভূমিকা নিয়ে সরকার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দেয়ায় প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আইনুল ইসলাম মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো রুটিন দায়িত্বে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তিনি বলেন, সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এসেছে, তবে তাদের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা—রাষ্ট্র পরিচালনার গভীর সিদ্ধান্ত নেয়া নয়।

‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার’ না ‘রুটিন প্রশাসন’?

প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য এ ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এ সরকার একটি গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে, তাদের ম্যান্ডেট সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকে ঘিরে। তিনি জানান, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যেকোনো সময়ে নির্বাচন হবে এবং আমরা সরে যাবো।

তবে এ বক্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলছেন সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স। তার মতে, যে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারে পড়ে না। এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত।

বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রফেসর ইউনূস যেনো রাষ্ট্রকে নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছেন। তার দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন—অন্য কোনও কাজ নয়।

বিনিয়োগ আস্থা ও সংকট

১৩ মে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা যে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করে, তাতে অংশ নেয়নি বিএনপি ও বিজেপি। বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন। এ সরকার নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা না করে যে চেষ্টা করছে তা এক ধরনের প্রদর্শনী ছাড়া কিছু নয়।

কমিউনিস্ট পার্টির এম এম আকাশ বলেন, বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান। নির্বাচিত সরকার ছাড়া সেটা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নিট প্রবাহ কমেছে ২৬ শতাংশ এবং মূলধনি যন্ত্র আমদানি কমেছে ২৮.৬৮ শতাংশ, যা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর ও রাজপথের প্রতিবাদ

১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে বন্দরের কাজ করাতে হবে। রাজি না হলে রাজি করিয়ে করতে হবে।

এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাম জোটসহ নানা দল। তারা বলছেন, বিদেশিদের কাছে দেশের কৌশলগত সম্পদ তুলে দেয়ার কোনো অধিকার এ সরকারের নেই।

সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত, করিডোর নিরাপত্তার সঙ্গে—এ ধরনের সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকার নির্বাচনের আয়োজক। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বনসাঁই বাংলাদেশ?

এমন সমালোচনার জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বামদের দ্বারা প্রভাবিত হলে বাংলাদেশে চাকরি হবে না। তারা বাংলাদেশকে ডুয়ার্ফ বা বনসাঁই বানিয়ে রাখতে চায়।

তিনি জানান, বন্দর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর, রাখাইনে করিডোর—এসব বড় রকমের সংস্কার। সাত বছর ধরে রোহিঙ্গা সংকট চলেছে, এর একটি সমাধান খোঁজা জরুরি।

সবার দেশ/কেএম