ভর্তুকি নামছে অর্ধেকে
বিদ্যুতের দাম বাড়ার সঙ্কেত

২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এতে কোষাগারের ওপর আর্থিক চাপ কমবে বটে, তবে বাড়তি বোঝা গিয়ে চাপবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে—কারণ বাড়তে পারে বিদ্যুতের খুচরা দাম।
অর্থ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে এ বরাদ্দ কমিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে বাজেট কমছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ বছরের বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হয়েছে গত কয়েক বছরে জমে থাকা পাওনা পরিশোধে। দেশি-বিদেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল সম্প্রতি পরিশোধ করেছে সরকার। এখন নিয়মিত লেনদেনের বিল মেটানোর দিকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে অর্থনীতিতে। ফলে আগামী বছর ভর্তুকি বরাদ্দ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তার ভাষ্য, শুধু ভর্তুকি কমানো নয়—সরকার খরচ ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনছে। বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে অতিরিক্ত সক্ষমতা থাকায় নতুন জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আপাতত বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে কয়লা, তেল ও গ্যাস-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমানো হবে।
জ্বালানি খাতে মূল্য কিছুটা কমার পূর্বাভাসও রয়েছে। সে সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস বা অপচয় হ্রাসে জোর দেয়া হচ্ছে।
দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি উৎপাদকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে তা পাইকারি দরে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে পিডিবি। এরপর এ কোম্পানিগুলো খুচরা দামে তা বিক্রি করে সাধারণ গ্রাহকদের কাছে। তবে উৎপাদন ও সঞ্চালন খরচের তুলনায় খুচরা মূল্য কম হওয়ায় সরকার পিডিবিকে ভর্তুকি দিয়ে সে ঘাটতি পূরণ করে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা ৬২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। বাকি অর্থও ধাপে ধাপে ছাড় করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে বড় অঙ্কের বকেয়া পাওয়াদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি, সামিট, ইউনাইটেড পাওয়ার, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি, সেমকর্প, অ্যাগ্রেকো এবং ডরিন পাওয়ার।
পিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় কমাতে সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে নতুন করে দর-কষাকষি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ অনুযায়ী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে ভর্তুকি কমার অর্থই হচ্ছে—জনগণের জন্য বিদ্যুৎ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্ট মহল জানায়, আগামী জুলাই-আগস্ট থেকেই বিদ্যুতের নতুন, বাড়তি দামে বিল গুনতে হতে পারে গ্রাহকদের। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিলো। সে অনুযায়ী, বর্তমানে আবাসিক খাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৪ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ৬১ পয়সা পর্যন্ত হয়ে থাকে। খরচ যত বেশি, প্রতি ইউনিটের দাম তত বাড়ে।
ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহকরা নিম্নচাপের বিদ্যুতের জন্য প্রতি ইউনিটে গুনছেন ১০ টাকা ৭৬ পয়সা, আর উচ্চচাপের শিল্প বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দিতে হচ্ছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা ইউনিটপ্রতি।
সবার দেশ/কেএম