গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক বছরের খতিয়ান
অন্তবর্তী সরকারের এক বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলো দুর্নীতি দমন, বৈষম্যমূলক নীতি বাতিল, জনবান্ধব সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা সংশোধন করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য থাকা বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে, যা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত রাজউকের প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডির ১২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের অনিয়মিত বরাদ্দ বাতিল করেছে, যেগুলো সাবেক দুদক কমিশনার, সাবেক সচিব, সাবেক জেলা জজ এবং প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দ ছিলো।
মন্ত্রণালয় শেরে বাংলা নগরের সাবেক গণভবন কমপ্লেক্সের ১৭.৪৭ একর জমি ও ভবন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে, যেখানে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শাহবাগে একটি এবং ৮টি জেলা শহরে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে; বাকি ৫৫ জেলায় নির্মাণকাজ চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–২০২৪-এ নিহতদের পরিবারের জন্য মিরপুরে ৮২০টি এবং কর্মক্ষমতা হারানো পরিবারগুলোর জন্য ১,৫৬০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প একনেক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
পরিকল্পিত নগরায়নের অংশ হিসেবে বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের অধ্যাদেশ খসড়া প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। স্থানিক পরিকল্পনা ও রাজউক অধ্যাদেশ সংশোধনের কাজও এগোচ্ছে। নিম্নবেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য আজিমপুরে ৮৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিশেষ অডিটে ২০০৯–২০২৪ মেয়াদে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৮২টি অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে; রাজউকের অডিট চলছে। গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১১ জন কর্মকর্তাকে অসদাচরণের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং রূপপুর গ্রীন সিটি প্রকল্পের দুর্নীতিতে জড়িত ২৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে।
সচিবালয়ের ১৫ ও ২০ তলা দুটি ভবনের নির্মাণ শেষ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিটিভি ভবনসহ সারাদেশের সরকারি স্থাপনা দ্রুত মেরামত করে ব্যবহারের জন্য ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
জনসেবা সহজীকরণের জন্য প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও নামজারি প্রক্রিয়ায় পূর্বানুমোদনের বাধ্যবাধকতা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বদলি ও পদায়ন নীতিমালা–২০২৫ এবং প্রশিক্ষণ নীতিমালা–২০২৫ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়াতে ৩১১টি নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দাবি, এসব পদক্ষেপে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গতি এসেছে।
সবার দেশ/কেএম




























