সবার দেশ প্রতিবেদক ৫ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারিতে ভোট, একদিনেই হতে গণভোট
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্ভাব্য দুটি তারিখ রাখা হয়েছে—৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারি। এসব তারিখ ধরে নির্বাচন-সম্পর্কিত সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন। আর তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে ডিসেম্বরের ৪ অথবা ৭ তারিখ।
এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের চিন্তা করছে ইসি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মিললেই কমিশনের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক মেরুকরণ ও মতভেদ
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুই মেরুতে অবস্থান করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গণভোটের বিষয়বস্তু ও সময় নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে।
গত ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন,
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো যেন এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব দেয়। তবেই সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।
কমিশনারদের অবস্থান
নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক অবস্থান এখনো না জানা গেলেও কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যদি গণভোট করতেই হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করলে কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে।
তিনি আরও বলেন,
দুই দিনে দুই ভোট আয়োজন করা ব্যয়সাপেক্ষ। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা একসঙ্গেই করতে পারবো। ফেব্রুয়ারিতেই হলে এক আয়োজনেই দুই ভোট দেয়া সম্ভব।
তবে এজন্য কিছু কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ বাড়াতে হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গণভোটের সময় নিয়ে দ্বিধা
গণভোটের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ এখনো কাটেনি। কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে, আবার অনেকে একই দিনে আয়োজনের পক্ষে।
ইসির প্রস্তুতি চূড়ান্ত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, দেশের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১, যেখানে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি ও নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ১২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে তিনটি দল—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)—নিবন্ধন পাবে।
নতুন আইন ও প্রযুক্তি
আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় নির্বাচনি আইনের সব সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা এবং সাংবাদিক নীতিমালাও চূড়ান্ত।
প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেয়া হবে ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট’ ব্যবস্থায়। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এ নির্বাচনে ১০ লাখের বেশি লোকবল নিয়োজিত থাকবে।
একসঙ্গে দুই ভোটের সুবিধা
ইসির কর্মকর্তাদের মতে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে বিপুল অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। একই কেন্দ্র, একই ভোটকর্মী ও একই দিনে আয়োজন করলে সরকারি ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগেই ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরেই ঘোষণা হতে পারে তফসিল—যা দিয়ে শুরু হবে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কাউন্টডাউন।
সবার দেশ/কেএম
