নিষিদ্ধ বয়ান
নীরব সমর্থকদের দল বিএনপি, নেতাকর্মীদের নয়!
এ দলটি নেতাকর্মীদের নয়—এটি নীরব, বুদ্ধিমান, সচেতন, ভোট-নির্ধারক জনতার দল। তাদের মন জয় করতে না পারলে রাস্তায় যত বড় মিছিলই হোক—সেটি কেবল শব্দ, শক্তি নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি একটি অদ্ভুত বৈপরীত্য চরিত্রের নাম—এটি এমন এক রাজনৈতিক দল, যার রাজনীতিকে ধরে রেখেছে সংগঠনের বাহুবল নয়, বরং এক বিশাল নীরব জনসমর্থনের ঢেউ—যারা শ্লোগান দেয় না, মিছিল করে না, দলের কার্যালয়ে যায় না, কিন্তু ব্যালটের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক গতিপথ বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এ নীরব জনসমর্থনই বিএনপির আসল শক্তি; নেতাকর্মীদের জোর-জবরদস্তি নয়, কিংবা সংগঠনের শোডাউন নয়।
দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো স্বাধীনতার ঘোষক সেনানায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রয়াসে, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলটি প্রকৃত শক্তির রূপ পেয়েছে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ নয় বছরের রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার সংগ্রামী নেতৃত্বে। অথচ যে নেত্রীকে ঘিরে দলের রাজপথের লড়াই, যাকে ঘিরে লক্ষ মানুষের আবেগ—তারই সংকটকালে নীরব জনতা যখন হৃদয়ে ব্যথা নিয়ে প্রার্থনায় দাঁড়ায়, তখন দলের অনেক নেতার অদ্ভুত উদাসীনতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
নেতাকর্মীদের দল নয়—সমর্থকদের দল
বিএনপি বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতো ‘নেতাকেন্দ্রিক অনুসারী’ নয়। এ দলটির মূল শক্তি ভাসমান ভোটার, সচেতন মধ্যবিত্ত, দেশের উৎপাদনশীল শ্রমজীবী মানুষ ও উচ্চশিক্ষিত নাগরিকদের এক নীরব শ্রেণি। যারা মিছিল-সমাবেশে যায় না; দলীয় টেন্ডার খায় না; নেতা-এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখে না; সরকারি সুবিধা বা দলীয় প্রভাবের স্বপ্নেও নয়। কিন্তু নির্বাচনের দিন নীরবে এসে ভোট প্রদান করে। বাস্তবে এদের একটি ভোট পুরো পাড়ার ভোট-মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলে।
এ শ্রেণি আওয়ামী লীগ বা জামায়াতের ভোটারদের মতো দল-দর্শনে অন্ধভাবে আবদ্ধ নয়। বিএনপি ভালো করলে তারা নীরবে খুশি হয়, ভুল করলে উচ্চস্বরে সমালোচনা করে। গণতন্ত্র-বিষয়ক প্রশ্নে, নাগরিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও প্রশাসনিক দুর্নীতির ইস্যুতে তারা সংবেদনশীল। এরা তোষামোদ পছন্দ করে না, দলে ব্যক্তিপূজা পছন্দ করে না; তারা নেতৃত্বের সততা খোঁজে। এ শ্রেণি গত ৩ দশকে বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল।
১৯৯১—যেদিন নীরব ভোটাররা বদলে দিলো দেশের ইতিহাস
১৯৯১ সালের নির্বাচন তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বিএনপির নেতারাও তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বিরোধী দলে বসার; আওয়ামী লীগও ভেবেছিলো ক্ষমতায় ফেরার সব হিসাব তাদের পক্ষে। নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মন্ত্রীত্বের শপথ নেয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণ করলো নীরব ভোটাররা। তারা সব হিসাব পাল্টে দিয়েছিলো, যাদের কোনও দলীয় পরিচয় নেই, কিন্তু দেশের নেতৃত্ব কোন হাতে থাকবে—সে বোধে তারা বিএনপিকে সরকারে বসিয়ে দিলো সাধারণ, নীরব ভোটাররা। এটাই বিএনপির বাস্তব শক্তি।
এ ভোটারদের রাজনৈতিক অঙ্কটি পরিষ্কার ছিলো: স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক নীতি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা—এ সব ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে আরও গ্রহণযোগ্য মনে করেছিলো।
রাস্তায় গর্জন নয়—নীরবতার শক্তি
বাংলাদেশে প্রচলিত ধারণা হলো: একটি দল যত বেশি কর্মী ঝড়াতে পারবে, মিছিল দেখাতে পারবে—ততই সে শক্তিশালী। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে এ অঙ্কটি ব্যতিক্রম। BNP ক্ষমতায় এসেছে জনতার নিঃশব্দ ভোটে, রাস্তায় বিশাল কর্মীশক্তির প্রদর্শনীতে নয়। এটাই বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং paradox।
তাই তো আজও প্রশ্ন ওঠে—
২০ লাখ মানুষের ঢাকার সমাবেশ কেন এক সাউন্ড গ্রেনেডে ৫ মিনিটে ভেঙে পড়েছিলো?
যদি এটি প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আন্দোলন হতো—সমাবেশ এমন ভঙ্গুর হতো না।
ঢাকার রাজনৈতিক ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে— মঞ্চে নেতারা উঠার আগ পর্যন্ত লোকসমাগমে জায়গা থাকে না, কিন্তু একটি সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে পুরো সমাবেশ ফাঁকা হয়ে যায়। এটি কি সংগঠনের শক্তির পরিচয়? নাকি নীরব সমর্থকদের ওপর নির্ভরতা? সত্য হলো—বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে ততোটা শক্তিশালী নয়, যতটা শক্তিশালী ব্যালটের রাজনীতিতে।
BNP নেতাকর্মীদের সীমাবদ্ধতা: বাস্তবতার নগ্ন উদাহরণ
বেগম খালেদা জিয়া আটকে গেলেন, নেতা-কর্মীরা নীরবই রইলেন
২০০৬-০৭ অথবা পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা গেছে—বেগম খালেদা জিয়াকে ঘরবন্দী করতে ব্যবহার করা হয়েছিলো বালুর ট্রাক। এটি যখন বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হলো, তখন প্রশ্ন উঠেছিলো—
বিএনপি যে দল, সেটি কি কেবল পোস্টার ছাপানো আর বিবৃতি দেয়া ছাড়া আর কিছু পারে না?
যদি বিএনপির সংগঠন শক্তিশালী হতো, তবে নেত্রীকে এভাবে আটকে রাখা সম্ভবই ছিলো না।
ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত বছরগুলোতে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করতে বালুর ট্রাক, পরিবহন অবরোধ, পুলিশি বলয়—এসব সামনে পেয়েও বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে ছিলেন দুর্দমনীয় তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমায়। কিন্তু দলীয় প্রতিরোধ কোথায় ছিলো? দল কি তখন সংগঠনগত শক্তি দেখাতে পেরেছিলো? উত্তর—না।
নেত্রীর স্বাস্থ্যগত সংকটে—নেতারা কোন পথে?
সাম্প্রতিক একটি দৃশ্য বাংলাদেশের মানুষ ভুলবে না—খালেদা জিয়া মৃত্যুঝুঁকিতে, সারা দেশে ধর্ম-বর্ণ-দল নির্বিশেষে প্রার্থনার ঢল; অথচ এ সময় বিএনপির একাংশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। মুন্সিগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে—দলীয় লড়াইয়ের নামে। এটি কেবল রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা নয়—এটি নৈতিক বিচ্ছিন্নতাও।
আরও পড়ুন <<>> ৫৪ সেকেন্ডের ছাত্রলীগ, রাজপথ হারানো রাজনীতির প্রতিচ্ছবি
যে জায়গায় বিএনপি ভেঙে পড়ে—সেটি তাদের ভেতরেই
স্থানীয় নেতৃত্বের আসল মানসিকতা
গত উপজেলা নির্বাচনে একজন স্থানীয় বিএনপি নেতার মন্তব্য ছিলো আরও নির্মম:তিনি বলেছিলেন—
খালেদা জিয়া মরে গেলে বাঁচি! তাকে নিয়ে প্রোগ্রাম দিলে যেতেই হয়। না গেলে পদ থাকে না, আর গেলে আওয়ামী লীগের হাতে মার খেতে হয়—বিপদ দুই দিকেই।
এ বক্তব্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সংগঠনগত দুর্বলতার নগ্ন চিত্র: এটি নেতাকর্মীদের এক বড় অংশের বাস্তব মনোভাব—
- নেতারা দলের প্রতি নয়, ‘পদ’ ও ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তার’ প্রতি বেশি মনোযোগী
- নীরব সমর্থকরা দলকে বাঁচায়, কিন্তু নেতারা সমর্থকদের হতাশ করে
- রাজপথের চেতনা নেত্রীর, কিন্তু সংগঠনের শক্তি ক্ষয় হয়েছে ভেতরের লোভ ও দ্বন্দ্বে
বিএনপিকে ক্ষমতায় আনে সাইলেন্ট ভোটাররা, নেতা-কর্মীরা নয়
এটাই BNP-র বাস্তবতা— যখনই BNP সরকারে এসেছে, তা কখনই মিছিল-মিটিং বা নেতা-নেত্রীদের কর্মদক্ষতার কারণে নয়; বরং এসেছে নীরব, শিক্ষিত, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের ভোটে যারা মন্দের ভালো বিএনপিকে বেছে নিয়েছে।
বিএনপির তিন প্রজন্ম—তিন ধরণের বিভাজন
আজকের বিএনপিকে বোঝার জন্য দলটিকে তিন প্রজন্মে ভাগ করে দেখতে হয়:
- জিয়া প্রজন্ম – আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক শ্রেণি: তারা দলকে রাষ্ট্রচিন্তার জায়গা থেকে দেখতো। দুর্নীতির ঠাঁই ছিলো না।
- খালেদা জিয়া প্রজন্ম – রাজপথের সংগ্রামী ও সংগঠকশক্তির শ্রেণি: দীর্ঘ ৯ বছরের আপসহীন লড়াই, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ—এরা তৃণমূলকে ধরে রেখেছিলো।
- ২০০১–পরবর্তী প্রজন্ম – সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগী শ্রেণি: টেন্ডার, চাঁদাবাজি, কমিশন রাজনীতি—এ শ্রেণি সংগঠনকে দূষিত করেছে। আজকের অনেক দ্বন্দ্ব এ গোষ্ঠীর মধ্যেই মূলত।
এ বিভাজনের পরিণতিতে নীরব ভোটাররা ক্রমশ আস্থাহীন হয়েছেন। কারণ তারা আচরণে বৈষম্য দেখে—দলের আদর্শ কোথায় গেলো? রাজনীতির নৈতিকতা কোথায়?
নীরব সমর্থকরা BNP-কে কেন সমর্থন করে?
- রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার আকাঙ্ক্ষা: বাংলাদেশের শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ভোটারদের একটি অংশ মনে করে—একক আধিপত্যের রাজনীতি দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই তারা বিএনপিকে দ্বিদলীয় ভারসাম্যের শক্তি হিসেবে দেখে।
- রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার প্রতিরোধের আশা: যারা মনে করেন রাষ্ট্রযন্ত্রের অতিরিক্ত ক্ষমতাকেন্দ্রীকরণ বিপজ্জনক—তারা ভোট দিয়ে BNP-কে শক্তিশালী করতে চায়, যদিও নিজেদের প্রকাশ করে না।
- পরিবারভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্বাস: ১৯৯১–২০০১—এ সময়ের অভিজ্ঞতা অনেক পরিবারে এখনো BNP-র প্রতি নরম মনোভাব তৈরি করে। এ ভোটাররা গ্যালারিতে থাকে, কিন্তু খেলায় নামে না—শুধু নির্বাচনের দিন ছাড়া।
বিএনপির রাজনৈতিক দূর্বলতা কোথায়?
- ব্যক্তিগত স্বার্থে জর্জরিত নেতৃত্ব: বিএনপির বড় সমস্যা— দলের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা টেন্ডার, নিয়োগ, পদ ধরে রাখা এসবের পেছনে বেশি ব্যস্ত থাকে। নেত্রীর মুক্তি বা দলীয় সংগ্রাম তাদের কাছে গৌণ।
- সংগঠন পরিচালনার অভাব: স্থানীয় পর্যায়ে BNP-র বহু কমিটি বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়। অনেকে চেয়ার দখল করে রেখেছে, কিন্তু মাঠে নেই। ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট পাঠানোও অনেকসময় সম্ভব হয় না। এর বিপরীতে নীরব সমর্থকরা হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
- নীতিগত রাজনীতির সংকট: দলের অনেক সিদ্ধান্ত নীতির ভিত্তিতে নয়, বরং ব্যক্তিগত সমঝোতায় নেয়া হয়।
- এর ফলে সাইলেন্ট ভোটারদের আস্থা কমে যায়।
বিএনপির ভবিষ্যৎ—যে সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে
- নীরব ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার: এ ভোটাররা দলকে সব দিয়েছে— তবে দল তাদের কিছুই দেয়নি। তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা, নীতি, আস্থা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।ও
- স্বার্থপর নেতৃত্বকে পরিত্যাগ করা: যে নেতারা— মাঠে নেই, বিপদের সময় নেই, নেতা-নির্ভর রাজনীতি চালায়, তাদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি না করলে বিএনপি আর আগের জায়গায় ফিরতে পারবে না।
- সংগঠনকে কর্মক্ষম করা: কমিটি, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন— সব পর্যায়ে সক্রিয় সংগঠন ছাড়া নীরব সমর্থকও একসময় মুখ ফিরিয়ে নেবে।
বিএনপি বেঁচে আছে নীরব ভোটারদের কারণে
যারা কখনও শ্লোগান দেয় না, কখনো পোস্টার লাগায় না, কোনও নেতার হাদিয়া নেয় না, কখনও মিছিলেও যায় না— কিন্তু ভোটের দিনে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দেয়। এসব নীরব মানুষই বিএনপির আসল শক্তি। নেতা-কর্মীরা নয়—হাজারো ভোটারের নীরব সমর্থনই বিএনপির অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। যদি বিএনপি তাদের বুঝতে পারে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে, তবে দলটি আবারও ক্ষমতার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারে। নইলে ইতিহাসের পাতায় বিএনপি থেকে যাবে— নেতা-কর্মীদের দল নয়, নীরব সমর্থকদের একটি রাজনৈতিক বিস্ময় হিসেবে।
গণসমর্থন ও সংগঠন—এ দুইয়ের বিশাল ফারাক
বাংলাদেশে বিএনপি একটি অদ্ভুত বৈপরীত্যের দল; যার জনসমর্থন বিশাল কিন্তু সংগঠন দুর্বল, নেত্রী জনপ্রিয় কিন্তু নেতারা বিভক্ত, ভোটাররা শিক্ষিত কিন্তু কর্মীরা আদর্শগতভাবে ভঙ্গুর। এ gap—ই বিএনপির রাজনীতির মূল সংকট।
নীরব সমর্থকদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই
নীরব ভোটারদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—তারা দলকে ভোট দেয়, কিন্তু দলের ভেতর হস্তক্ষেপ করে না। তারা চায়— স্বচ্ছ নেতৃত্ব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার, মানবাধিকার নিশ্চয়তা, অর্থনীতিতে দক্ষতা। কিন্তু দলের ভেতর এদের প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে নীরব শ্রেণি দল থেকে দূরে সরে যায়, আবার কিছুদিন পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে ফিরে আসে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট—নীরব শ্রেণির আস্থা কি ফিরে আসবে?
দেশে বর্তমানে নানামুখী রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবর্তনের প্রত্যাশা এবং দুর্নীতিবিরোধী জনমানস স্পষ্ট। এ মুহূর্তে যেকোনও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ভিত্তি হবে নীরব শ্রেণি—যারা রাজপথে দাঁড়ায় না, কিন্তু ভোটবাক্সে দাঁড়িয়ে ইতিহাস বদলে দেয়।
বিএনপির সামনে তাই একটি দ্বৈত চ্যালেঞ্জ: নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলে আনা এবং নীরব সমর্থকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। নীরব শ্রেণি চায়—পরিষ্কার নেতৃত্ব, দ্বৈত অবস্থান পরিহার, ভাঙা সংগঠন পুনর্গঠন, পরিবারভিত্তিক রাজনীতি নয়, নীতি-ভিত্তিক রাজনীতি।
শেষ কথা
বিএনপি যদি কখনও আবার ক্ষমতায় ফিরতে চায়—এটি নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ চিৎকারে নয়, বরং সে নীরব মানুষের ভোটেই সম্ভব, যাদের কোনও দলীয় পতাকা নেই, কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে তারা ভয়ঙ্কর সচেতন।
এ দলটি নেতাকর্মীদের নয়—এটি নীরব, বুদ্ধিমান, সচেতন, ভোট-নির্ধারক জনতার দল। তাদের মন জয় করতে না পারলে রাস্তায় যত বড় মিছিলই হোক—সেটি কেবল শব্দ, শক্তি নয়।
লেখক ও সংবাদকর্মী




























