সুদানে শহীদ ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর রাষ্ট্রীয় সমাধি
বিশ্বশান্তির সারথীদের লাশ আসছে শনিবার
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শাহাদত লাভকারী ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেশ আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) স্বদেশে পৌঁছাবে। দেশে ফিরার পর তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতায় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। এ বীর শান্তিরক্ষীরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করে বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায় যোগ করেছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকার কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে—জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে—বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর বর্বরোচিত ড্রোন হামলায় ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন। এছাড়া ৯ জন আহত হন। আহত সকলে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে চিকিৎসা শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন, বাকিরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয়
- শহীদ ৬ শান্তিরক্ষী হলেন:
- কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর)
- সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম)
- সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম)
- সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী)
- মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ)
- লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)
আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয়
আহত ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন:
- লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া)
- সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর)
- কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা)
- ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা)
- সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম)
- সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর)
- সৈনিক চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ)
- সৈনিক মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)
এ আহতদের মধ্যে ৩ জন নারী সৈনিক, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী শান্তিরক্ষীদের সাহসিকতার আরেক উদাহরণ।
বাংলাদেশের গৌরবময় অবদান
শহীদদের আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অটুট অঙ্গীকারের উজ্জ্বল নিদর্শন। জাতিসংঘের নীল পতাকা তলে তারা জীবন দিয়ে দেখিয়েছেন, শুধু দেশ নয়, বিশ্বের শান্তির জন্যও তারা প্রস্তুত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ১০টি দেশে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত, যার মধ্যে ডিআর কঙ্গোতে প্রথমবারের মতো ৩টি হেলিকপটার মোতায়েন করা হয়েছে। সুদানে এ ঘটনা ছাড়াও মোট ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শাহাদত লাভ করেছেন: সেনাবাহিনীর ১৩১, নৌবাহিনীর ৪, বিমানবাহিনীর ৬ এবং পুলিশের ২৪ জন। আহত ২৭২ জন।
শান্তির কূটনীতির মোরসাল
জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশকে 'শান্তির কূটনীতির মোরসাল' বলে অভিহিত করেছে। শুধু যুদ্ধবিরতি রক্ষা নয়, স্থানীয় জনগণের কল্যাণে স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিশু শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়নসহ উন্নয়নমূলক কাজে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অগ্রণী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কঠিন জলবায়ু ও সম্পদের অভাবের মধ্যেও তারা মানবতার সৈনিক হয়ে উঠেছেন।
সুদান-দক্ষিণ সুদান সীমান্ত, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সাইপ্রাস, ডিআর কঙ্গো, লেবানন, দক্ষিণ সুদান, পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, লিবিয়া থেকে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর পর্যন্ত—এসব কঠিন মিশনে তারা শান্তি, স্থিতিশীলতা, পুনর্গঠন ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় নিয়োজিত। শনিবার মাতৃভূমি স্পর্শ করবে এই বীর সারথীদের মরদেশ, যা দেশবাসীর বুকে গভীর শোকের সঙ্গে গৌরবের অনুভূতি জাগাবে।
সবার দেশ/কেএম




























