গ্রাম্য সালিশে বিএনপি নেতার অমানবিক নির্দেশ, ভিডিও ভাইরাল
ছেলেদের চুরির অভিযোগে দুই মাকে নাকে খত

চুরি করেনি তারা, বরং অভিযোগ এসেছে তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সন্তানদের অনুপস্থিতিতে জনসমক্ষে তাদের মাকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে নাকে খত দিতে বাধ্য করলেন এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান—যিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি।
ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। দলীয় অবস্থান থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলেও, আইনগত পদক্ষেপ এখনও অনিশ্চিত।
ঘটনাস্থলে গ্রাম্য সালিশ, সালিশে অপমান
ঘটনাটি ঘটে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে। ১ মে রাতে স্থানীয় খালুর দোকান এলাকায় বসে গ্রাম্য সালিশ। চুরির অভিযোগ—কয়েকটি কবুতর ও মুরগি হারানোর পেছনে সন্দেহভাজন দুই কিশোর। তবে সালিশ বসার আগেই ছেলেরা এলাকা ছেড়ে পালায়। সালিশি রাগ গড়িয়ে পড়ে ছেলেদের মায়েদের ওপর। তখনই নাটকীয়ভাবে আবির্ভাব ঘটে সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুর।
তিনি নিজ হাতে মাটিতে লাঠি দিয়ে দাগ কেটে নির্দেশ দেন—দুই মা যেন নাকে খত দেন। তাদের হাঁটু গেড়ে বসিয়ে জনসম্মুখে 'চুরির দায়' স্বীকার করিয়ে নেয়া হয়। ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের সে ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং নিন্দার মুখে পড়েছে ক্ষমতার এ অপপ্রয়োগ।
ভিডিওর ভাষ্য: ক্ষমতা ও অপমানের জোটবদ্ধতা
ভিডিওতে দেখা যায়, দুই নারী মাথা নিচু করে কাঁদছেন, চারপাশে পুরুষদের ভিড়। কোনও আইন, কোনোও মানবতা সেখানে দৃশ্যমান নয়—শুধু অপমান আর দমন। ক্ষমতাবান এক রাজনৈতিক নেতা তার প্রভাব খাটিয়ে দুই নারীকে সামাজিকভাবে হেয় করেছেন—এমনটাই বলছে স্থানীয়রা।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ
ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এজিপি) অ্যাডভোকেট রহিমা খাতুন হেলপী বলেন, এটি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। আইনে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই যাতে একজন রাজনৈতিক নেতা বা সালিশদার জনসম্মুখে কাউকে এমনভাবে হেনস্তা করতে পারেন।
নিজেই স্বীকার করেছেন নেতা
বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু স্বীকার করেছেন যে কিশোরদের অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ‘নাকে খত’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও তিনি স্বীকার করেন এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে তার বক্তব্যে অনুশোচনার ছাপ অনুপস্থিত।
দলীয় পদ স্থগিত, কিন্তু মামলা অনিশ্চিত
সামাজিক চাপের মুখে রোববার বিকেলে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপি এক বিবৃতিতে দেলুর সকল দলীয় পদ স্থগিত করে। ফেনী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বকুল এবং সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
তবে রাজনৈতিক পদ স্থগিত হলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক, নির্যাতিত পরিবারে নীরবতা
নির্যাতিত দুই নারী বা তাদের পরিবার এখনো মুখ খোলেনি। স্থানীয়রা বলছেন, দেলুর প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সবার দেশ/কেএম