তফসিল ঘোষণার পর লালমনিরহাট জুড়ে উৎসবের আমেজ
১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর লালমনিরহাট জুড়ে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জেলার সর্বত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক আলোচনায় সরব হয়ে ওঠে জনপদ।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, বাছাই ৪ জানুয়ারি ২০২৬ এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি ২০২৬। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২১ জানুয়ারি ২০২৬।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে।
তফসিল ঘোষণার পর জেলা শহর থেকে জনবহুল বাজার, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, বিপনী বিতান, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকানসহ সব জায়গায় জাতীয় নির্বাচন এখন আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রার্থীতা, সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা বিশ্লেষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সচেতন নাগরিক সমাজ সবাই ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, আসন্ন নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের ধান ব্যবসায়ী মোকলেস উদ্দিন বলেন, তফসিল আরও আগে ঘোষণা হলে গুজব ও বিভ্রান্তি কম থাকত। নির্বাচন হবে কিনা এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ছিলো।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে।
জেলা সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হরিঠাকুর এলাকার কৃষক আলী হোসেন বলেন, অনেক দিনের অপেক্ষার পর তফসিল ঘোষণা হওয়ায় স্বস্তি এসেছে। এবার শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারাই তার একমাত্র প্রত্যাশা।
এদিকে বিএনপি ও ইসলামী দলগুলো তফসিল ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইয়াসিন আলী মোল্লা বলেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলো, যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে লালমনিরহাট-৩ আসনের গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাকিউল হাসান সিদ্দিক (রাসেল) তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
লালমনিরহাট-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জনগণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন। ঘোষিত তফসিল মানুষকে সে আশার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামী সবসময় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এবারও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে।"
লালমনিরহাট-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান বলেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
লালমনিরহাট-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী এ্যাড. ফিরোজ হায়দার লাভলু বলেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলার রাজনৈতিক পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই এখন সবার প্রত্যাশা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি লালমনিরহাট-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত জনগণের মনে তফসিল ঘোষণায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। অনিশ্চয়তার বদলে এখন তারা নির্বাচনের দিনটির অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন।
উল্লেখ্য, জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী লালমনিরহাট জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৭০ হাজার ৪২২ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৭ জন।
সবার দেশ/কেএম




























