সিদ্ধান্তে নাটকীয় পরিবর্তন
কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের
দাবি আদায়ের আন্দোলনে নতুন মোড় এসেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিলেও রাতের সিদ্ধান্তে আবারও কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয় থেকে দাবিগুলো নিয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দেয়া হলেও শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন—অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন–লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক হবে। সে বৈঠক পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত থাকবে, তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
কিন্তু রাত ১১টার দিকে ‘অ্যাসিসটেন্ট টিচারর্স অব জিপিএস বিডি’ নামের ফেসবুক পেজে খায়রুন নাহার লিপির বরাত দিয়ে নতুন ঘোষণা আসে—সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে, অবস্থান কর্মসূচি ও ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকবে।
তিন দফা দাবিতে অনড় শিক্ষকরা
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। তাদের তিন দফা দাবি হলো—
- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ,
- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন,
- শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
পুলিশের হামলায় উত্তপ্ত শাহবাগ
শনিবার বিকেলে কলমবিরতি কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠিচার্জে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষক নেতাদের দাবি, ওই ঘটনায় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হন এবং পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে রোববার দুপুরে পাঁচজনকেই মুক্তি দেয়া হয়।
শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর নৃশংস হামলার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারকে নিতে হবে।
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে কর্মবিরতি
আন্দোলনের ঢেউ রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদারীপুরের শিবচরের ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিশালের হিজলার পশ্চিম চর বাউশিয়া বিদ্যালয়, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ তিমিরকাঠি ও বৈদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন চলবে।
তবে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২১ নম্বর চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক শাহিনুর আল আমিন। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানাই, কিন্তু কর্মবিরতি পালন করছি না।
ঐক্যবদ্ধ চার সংগঠন
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে চারটি সংগঠন এ আন্দোলনে যুক্ত—
- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম–শাহিন),
- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন–লিপি),
- বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি,
- সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট লিখিত আশ্বাস না আসা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
এক শিক্ষক নেতা বলেন, আমরা শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি, অথচ নিজেদের ন্যায্য দাবি পেতে রাজপথে আসতে হয়। এবার ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না।
সবার দেশ/কেএম




























