মোদির সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ, ভারতীয়দের ক্ষোভ
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজেদেরই সংকটে ফেলেছে ভারত। ঢাকাকে চাপ দিতে গিয়ে মোদি সরকারের নেয়া ‘কঠোর পদক্ষেপ’ এখন উল্টো ভারতের সাধারণ মানুষের কাঁধেই ভার হয়ে ফিরেছে।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার বলছে, এ সিদ্ধান্ত এখন ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলোর জন্য ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাতী হামলা’র মতো হয়ে উঠেছে।
বিধিনিষেধে বিপর্যস্ত বন্দরগুলো
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। বিশেষভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এসব পণ্য সেভেন সিস্টার্স ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পেট্রোপোল, হিলি, মাহাদীপুর, চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি সীমান্তবন্দরগুলো।
দ্য ওয়্যার জানায়, আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০–৭০০ ট্রাক পণ্য যেত-আসতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে মাত্র ২০০-এর নিচে। এর জেরে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার দিনমজুর, ট্রাকচালক ও পণ্য খালাসকারী। অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাচ্ছেন।
পোশাক সংকটে ভুগছে পশ্চিমবঙ্গ
বাংলাদেশ থেকে ভারতের পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ। আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে রাজ্যটিতে চাহিদার তুঙ্গে থাকার কথা ছিলো। অথচ এখন সেখানকার বাজারগুলোতে বাংলাদেশি পোশাকের সরবরাহ প্রায় শূন্য। বিকল্প উৎস থেকে পোশাক আনতে সময় যেমন বেশি লাগছে, খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা পড়েছেন ভয়াবহ বিপাকে।
শ্রমজীবীদের রোজগার হুমকিতে
বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার এ ঢেউয়ে সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছেন দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১২–১৫ হাজার শ্রমজীবী মানুষ। কেউ পণ্য টেনে, কেউ ট্রাক চালিয়ে, কেউ খালাসের কাজ করে যে রোজগার করতেন, এখন তা প্রায় বন্ধ।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য: ‘বুমেরাং হয়ে ফিরেছে’
অর্থনীতিবিদ ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল ভারতের জন্য এখন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে। ঢাকা সরকার চীন ও তুরস্কসহ বিকল্প বাজার ও লজিস্টিক সংযোগের দিকে নজর দিচ্ছে, ফলে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমছে। এর মধ্যেই ভারতীয় আমদানিকারকদের বিশাল একটি অংশ বাংলাদেশের সমান্তরালে মিয়ানমার, নেপাল বা থাইল্যান্ড থেকে বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে না, ফলে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ছে।
সাধারণ ভারতীয়দের কান্না
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার এক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশি শার্টের যে মান আর দাম আমরা পেতাম, তা ভারতীয় বাজারে পাওয়া যায় না। ক্রেতারা ক্ষেপে যাচ্ছে, বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। মোদিজির এ সিদ্ধান্তে আমরা মরছি।
এক ট্রাকচালক বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে তিনবার বাংলাদেশে যেতাম। এখন দুই সপ্তাহেও একটাও ট্রিপ পাই না। চালাবো কী, খাবো কী?
বাংলাদেশ কি চাপের মুখে?
বাংলাদেশ সরকার এখনও এ সিদ্ধান্তের সরাসরি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়নি। তবে সরকার ভারতের বিকল্প খুঁজছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বিকল্প বাজার ও রুট খুঁজে বের করতে নীতিগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুরস্ক, ইউএই, সৌদি আরব ও চীনের মধ্য দিয়ে ইউরোপ-গন্তব্য পণ্য পরিবহনে জোর দেয়া হচ্ছে।
মোদি সরকারের ‘ঢাকাকে শিক্ষা দেওয়া’র কৌশল শেষ পর্যন্ত নিজেদের ঘাড়েই গিয়ে পড়েছে। যেসব সিদ্ধান্তে পরাশক্তির কূটনৈতিক ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করা হয় না, সেগুলো যে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে—এটি তারই একটি দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশকে শায়েস্তা করতে গিয়ে ভারতের বাজারেই এখন শুনশান নীরবতা। আর সে নীরবতা ভেঙে কাঁদছে ভারতের সাধারণ মানুষ—দোকানি, ট্রাকচালক, দিনমজুর।
সবার দেশ/কেএম




























