‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন হবে কীভাবে, যা বললেন আলী রীয়াজ
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রণীত ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
শুক্রবার (৮ আগষ্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কমিশনের কাজ মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এর ভিত্তিতেই একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যেটির ওপর মতামত গ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি জানান, সনদটি কখন স্বাক্ষরিত হবে, তা নির্ভর করছে তৃতীয় ধাপের সংলাপ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ওপর। দুই দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ খসড়া সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। এরপর মতানৈক্য থাকলে তা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
সংসদ সদস্যদের প্রভাব কমানোর ব্যাপারে একমত
আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের প্রভাব আইনত বৈধ নয় এবং আদালতের রায়ও এ বিষয়ে পরিষ্কার। প্রথম পর্বের আলোচনায় এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও একমত হয়েছে কমিশন।
তিনি বলেন,
ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাই সংস্কারের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ না রাখা এবং মেয়াদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাস্তবায়নের পথ কী হবে?
সনদটি বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার নাকি পরবর্তী সংসদ—এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা কোনো সুপারিশ দিচ্ছি না। বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের মত ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হবে।
আলোচনা দীর্ঘ হবে না
তৃতীয় ধাপের সংলাপ দীর্ঘ হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা প্রয়োজন হবে না বলেই মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান জানে। তাই স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।
ভিন্নমতকেও গুরুত্ব
কমিশনের আলোচনায় দ্বিতীয় ধাপে ২০টি মৌলিক কাঠামোগত বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে সম্পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে এবং ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, নোট অব ডিসেন্টকেও সমান গুরুত্ব দেয়া হবে। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও দেশের বাস্তবতার আলোকে এসব বিষয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হবে।
সনদ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
তিনি মনে করেন, কেবল একটি নির্বাচন ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান ঠেকাতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন।
কিছু প্রস্তাব বাদ
কমিশনের প্রথম পর্বে যেসব সুপারিশ নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য ছিলো, সেগুলো দ্বিতীয় দফায় বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
- রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছরে আনা
- বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা
- “People’s Republic of Bangladesh”-এর বাংলা অনুবাদ ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করা
- সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বয়সসীমা ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করা
- স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন
- জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন
- ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠন
- ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত
- পিএস/এপিএস পদে সিভিল সার্ভিসের বাইরে নিয়োগ
মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না?
কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগস্টের মাঝামাঝি। আলী রীয়াজ জানান, কমিশন নিজে থেকে মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করবে না। তবে প্রয়োজন হলে সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।
সংক্ষিপ্ত সময়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠাকে তিনি দেশের ইতিহাসে একটি বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ যেমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, তেমনি এই সংস্কার উদ্যোগ দেশকে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিতে পারে।
সবার দেশ/কেএম




























