নেপথ্য কারিগরদের খুঁজছে গোয়েন্দারা
ওসমান হাদি হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীন চেয়ারম্যান
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখসারির সংগঠক এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে শাহীন চেয়ারম্যানের নাম উঠে এসেছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, এ হামলার অর্থ এবং অস্ত্র—উভয় সরবরাহের পেছনে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিলো।
তদন্তকারী সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এ বিশাল ষড়যন্ত্রে শাহীন চেয়ারম্যান একাই ছিলেন না। তার সাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গোয়েন্দাদের দাবি, গত ১২ ডিসেম্বর হাদির ওপর হামলার পর খুনিদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ। এ ঘটনায় হামিদের সংশ্লিষ্টতার জোরালো প্রমাণ পাওয়ায় তাকে গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, হামলার আগে ও পরে খুনিদের সাথে তার একাধিকবার কথা হয়েছিলো।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, জুলাই অভ্যুত্থানে হাদির সক্রিয় ভূমিকা এবং ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে তার আপসহীন বক্তব্য আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সে ক্ষোভ থেকেই হাদিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার একটি সুপরিকল্পিত ছক তৈরি করা হয়।
শাহীন আহমেদের অতীত রেকর্ডও এখন গোয়েন্দাদের নজরে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক এ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নথিতে তার নাম সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শাহীন চেয়ারম্যান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সেখান থেকেই বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে দেশে থাকা ‘স্লিপার সেল’-এর সাথে যোগাযোগ রেখে এ হত্যাকাণ্ডের নীল নকশা বাস্তবায়ন করেন তিনি। কয়েক দিন আগে উদ্ধার হওয়া কিছু হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ড এবং খুদেবার্তার সূত্র ধরে তার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুতই মাস্টারমাইন্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সবার দেশ/কেএম




























