খুনিদের শাস্তি ও ভারতবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা প্রবাসীদের
লন্ডনে শহীদ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিশিষ্ট নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির সন্ত্রাসী হত্যায় শোকাহত প্রবাসী বাংলাদেশিরা লন্ডনে গায়েবানা জানাজা আদায় করেছেন।
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ইউকের উদ্যোগে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাদ জুমার নামাজের পর লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। হাজারও প্রবাসী শহীদ হাদির জন্য দোয়া আদায় করেন এবং খুনিদের কঠোর শাস্তি এবং ভারতের আধিপত্যবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা দেন।
শহীদ হাদির সংক্ষিপ্ত পরিচয়
গত সপ্তাহে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিট সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাত লাভ করেন শরিফ ওসমান বিন হাদি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন তিনি। ছাত্র-জনতার এ বিপ্লবে তার নেতৃত্ব দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। সিঙ্গাপুরে তার মরদেশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়েছে, তাই লন্ডনসহ বিশ্বব্যাপী প্রবাসীরা গায়েবানা জানাজা আদায় করছেন।
আলতাব আলী পার্কে শোকের সমাবেশ
বাদ জুমার নামাজ শেষে আলতাব আলী পার্কে হাজারো প্রবাসী জড়ো হন। বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ জানাজায় কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। শহীদ হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া এবং দীর্ঘ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিতরা ফাতেহা পড়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা বক্তব্যে বলেন, শহীদ ওসমান হাদির রক্ত বৃথা যাবে না। তার হত্যার পেছনে যারা দায়ী, তারা চাইলে যেখানেই লুকাক—তারা আইনের হাত থেকে নিরাপদ থাকবে না। তারা ভারতের আধিপত্যবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার ঘোষণা দেন এবং দেশে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার তুর্কের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বানকে সমর্থন করেন তারা।
প্রবাসীদের রাগ-বিদ্রোহ
অনেক প্রবাসী বক্তব্যে বলেন, জুলাইয়ের শহীদদের রক্তে গঠিত বাংলাদেশকে আবারও অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। শহীদ হাদির হত্যা সে চক্রান্তেরই অংশ। তারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লন্ডনে প্রতিবাদ মিছিল, সেমিনার ও সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। অনেকে স্লোগান দিয়ে বলেন, শহীদ হাদির রক্ত বৃথা যাবে না, খুনিরা ফাঁসিতে ঝুলবে।
এ জানাজায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবাসী শাখার নেতারা বলেন, শহীদ হাদির আত্মত্যাগ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নতুন অধ্যায় লিখবে। তারা দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, দ্রুত তদন্ত করে খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার করতে। লন্ডনের এ জানাজা শহীদ হাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
লন্ডন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা শহীদ হাদির জন্য গায়েবানা জানাজা আদায় করছেন। এ ঘটনা দেশবাসী ও প্রবাসীদের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে নতুন করে জোরালো করেছে।
সবার দেশ/কেএম




























