শোকাতুর গোটা জাতি
এ কে খন্দকার বীর-উত্তম আর নেই
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আব্দুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) আর নেই।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে এই বীর সেনানীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, দুই পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। তার আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেম এবং সাহস নতুন প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইতিহাসের সাক্ষী এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালে রংপুরে। তার পৈতৃক নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলায়। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন পাওয়ার মধ্য দিয়ে তার সামরিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে ভারতের আগরতলায় চলে যান এবং সরাসরি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুজিবনগর সরকার তাকে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্বাধীনতার পর তিনি নবগঠিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এ বাহিনীকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাকে ১৯৭৩ সালে 'বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া ২০১১ সালে তিনি পান রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান 'স্বাধীনতা পদক'। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান হলো।
সবার দেশ/কেএম




























