Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১১, ২ মে ২০২৫

এনসিপি’র হুঁশিয়ারি

আ’লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে কোনও নির্বাচন নয়

আ’লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে কোনও নির্বাচন নয়
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকে শুক্রবার (২ মে) জুমার নামাজের পর থেকে জমায়েত হতে থাকেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)'র নেতা-কর্মীরা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আয়োজিত এ বিক্ষোভ-সমাবেশ ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক রাজনৈতিক বজ্রপাতের ঘূর্ণি কেন্দ্রে।

সমাবেশে একাধিকবার আওয়ামী লীগকে ‘খুনি’, ‘গণহত্যাকারী’ এবং ‘ভারতপন্থি চক্র’ বলে আখ্যা দিয়ে দলটির নিষিদ্ধকরণের দাবি জানান এনসিপি নেতারা। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা হলে তা হবে ‘জুলাই যোদ্ধাদের লাশের ওপর দিয়ে’।

মূল দাবি:

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে—তাদের বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

হাইকোর্ট নয়, এবার আদালত হবে রাজপথ

সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি। এখন রাজপথই হবে আদালত, জনগণ হবে বিচারক।.

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে আগামীর প্রজন্ম সে ভুল মাফ করবে না। এ দল গণহত্যাকারী, স্বৈরাচারী, ভোট ডাকাতির এক নির্লজ্জ দানব। ওদের বিচার ছাড়া নির্বাচন মানেই জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

পুনর্বাসনের নামে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছেই

দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গত ৫ আগস্টে জনগণ আওয়ামী লীগের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে। এখন কেউ যদি ওদের ফিরিয়ে আনতে চায়, সেটা হবে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে। এনসিপি আছে মানেই, খুনি চক্রের রাজনীতি নেই।

তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার ও কিছু রাজনৈতিক দল মিলেই ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত।

দিল্লি নির্ভরতা ও 'পলিসি'র রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট লাইন

তাজনূভা জাবীন বলেন, এ দেশ চলবে না দিল্লির প্রেসক্রিপশনে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ। যারা ভারতের এজেন্ডা চাপিয়ে দিতে চাইবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।

মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে—৫ আগস্টে জনগণ সে রায় দিয়েছে। এখন কেউ উল্টো স্রোতে হাঁটলে জুলাই যোদ্ধারা রুখে দেবে।

হুমায়রা নূর বলেন, এ দেশ আর চলবে না দিল্লির প্রেসক্রিপশনে। দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।

মাহিন সরকার বলেন, মৌলিক সংস্কারের আগে নির্বাচনের চিন্তাও করা যাবে না।

তাহসীন রিয়াজের ভাষায়, আগামীর রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে ছুড়ে ফেলার রাজনীতি।

সংস্কার না হলে নির্বাচন মানেই বিশ্বাসঘাতকতা

আশরাফ উদ্দীন মাহাদীর কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ ও দ্রোহের সুর। তিনি বলেন, ফাঁসিকাষ্ঠে না ঝোলালে বিচার হবে না। আর যদি আবার কোনও তথাকথিত নির্বাচন হয়, সেটা হবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি।

সাইফুল্লাহ হায়দার স্পষ্ট করেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সমস্ত রাজনৈতিক কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।

আতিক মুজাহিদের বক্তব্যে ছিলো জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। দিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আইনী বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সংস্কার। জনগণ ৫ আগস্টেই এ রায় দিয়ে দিয়েছে।

শহীদের রক্তে লিখা রাজনীতি

শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা কামরুল হাসান বলেন, আমার ছেলেকে মেরেছে ৭০টা গুলি। একটি মানুষকে মেরে তারা কতটা ভয় পেয়েছিলো, সেটাই বোঝা যায়। এখন আমরা বিচার চাই। সে বিচার না হলে এ দেশে কোনো নির্বাচন চলবে না।

নেতা আতাউল্লাহ বলেন, এনসিপির একজন কর্মী বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।

সমাবেশময় জ্বলন্ত স্লোগান

সমাবেশ চলাকালীন সময় গর্জে উঠে নেতা-কর্মীদের কণ্ঠ:‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘ব্যান করো, ব্যান করো—আওয়ামী লীগ ব্যান করো’।

রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইঙ্গিতবহ এ বার্তা

এনসিপি-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ নেতারা সামান্তা শারমিন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহর উপস্থিতি সমাবেশকে দেয় পূর্ণাঙ্গ দলীয় স্বীকৃতি।

সমাবেশ শেষে নেতারা পুনর্ব্যক্ত করেন— বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য। তাদের বিচারের মঞ্চ হবে রাজপথ, আর ভোটের আগে চাই সংস্কার।

এ সমাবেশ শুধু একটি দলের ঘোষণা নয়, বরং একদল সংগঠিত, বিক্ষুব্ধ প্রজন্মের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে হুশিয়ারি। তারা বলছে—‘রক্তের দাগ শুকায়নি, বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়’।

সবার দেশ/কেএম