অধ্যাদেশ জারি, বিক্ষোভে অচল রাজস্ব ভবন
এনবিআর ভেঙে হলো দুই বিভাগ

দীর্ঘ বিতর্ক, আপত্তি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করে সরকার অবশেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দিয়েছে। সোমবার রাতেই অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআরকে দুটি পৃথক বিভাগে বিভক্ত করা হয়—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
বলা যায়, বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসনে এটা ৫৪ বছরের সবচেয়ে বড় কাঠামোগত পুনর্গঠন।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে,
- রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ এবং কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে।
- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আদায় এবং প্রশাসনিক কাজ তদারকি করবে।
এনবিআরের জনবল মূলত ব্যবস্থাপনা বিভাগে থাকবে, সেখান থেকে কিছু জনবল নীতি বিভাগে পাঠানো যাবে। আগের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) বিলুপ্ত হয়ে নীতি বিভাগে রূপান্তরিত হবে।
অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে দাবি
আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র কর কমিশনার ‘একতরফা ও অগভীর সংস্কার’ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো উন্নত বা উদীয়মান অর্থনীতিতে এভাবে রাজস্ব প্রশাসন ঢেলে সাজানো হয় না। সমীক্ষা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে একটি বিশেষ ক্যাডারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা।
বিক্ষোভে অচল রাজস্ব ভবন
সোমবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে বিক্ষোভ করেন পাঁচ শতাধিক কর কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো —বিসিএস কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা জানান।
বিপদে রাজস্ব আদায়
বিক্ষোভের কারণে সোমবার প্রায় সারাদিন এনবিআরের কার্যক্রম অচল ছিলো। এতে রফতানি-আমদানি সংশ্লিষ্ট ছাড়পত্র, রিটার্ন যাচাই, রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের রদবদল রাজস্ব প্রবাহে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কর প্রশাসনের মধ্যে আস্থাহীনতা ও প্রতিযোগিতা বাড়বে।
সংবিধানগত প্রশ্ন ও আশঙ্কা
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক বেসরকারি চ্যানেলকে বলেন, যেকোনও মেজর প্রশাসনিক পরিবর্তনের আগে অন্তত শ্বেতপত্র, পার্লামেন্টারি বিতর্ক বা রোডম্যাপ থাকা দরকার ছিলো। এক অধ্যাদেশেই এত বড় পরিবর্তন হঠাৎ করে চাপিয়ে দেয়া প্রশাসনিক বিচক্ষণতার প্রতিফলন নয়।
প্রতিক্রিয়ায় জোরালো বার্তা
কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডাররা একযোগে বলছে, আমাদের ওপর আমাদেরই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আয়কর অফিসারকে প্রশাসনের ব্যাকগ্রাউন্ডহীন কেউ নির্দেশনা দিলে দক্ষতা ও জবাবদিহি দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সবার দেশ/কেএম