কক্সবাজার সফর, সহচরী নারী, তলব আর রহস্য!
পাকিস্তান হাইকমিশনারের ঢাকা ত্যাগে গুঞ্জনের ঝড়

ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দুবাই হয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার এ হঠাৎ দেশত্যাগ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র কৌতূহল ও নানা গুঞ্জন।
বিশেষ করে কক্সবাজারে এক নারীর সঙ্গে সফর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ থেকে তলব—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে জটিল ও রহস্যময়।
কক্সবাজারে 'ঘনিষ্ঠ সফর' ও গোয়েন্দা তৎপরতা
সূত্র বলছে, ৯ মে রাতে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌঁছান পাকিস্তানের হাইকমিশনার। তার সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ এবং ঢাকার ঝিগাতলায় বসবাসরত এক নারী—হাফিজা হক শাহ। তিনজনেই আলাদাভাবে টিকিট কাটলেও কক্সবাজারে তারা ছিলেন একসঙ্গেই।
হাইকমিশনার সৈয়দ মারুফ অবস্থান করেন উখিয়ার সি-পার্ল হোটেলে। একই হোটেলে অবস্থান করেন হাফিজা হক শাহ, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৩তম ব্যাচের সহকারী পরিচালক এবং বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগে কর্মরত। এ সফর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি শুরু হয়। কক্সবাজারে হাইকমিশনারের যাতায়াত ও সফরসঙ্গীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বিষয়টি পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার টেবিলে।
একাধিক সূত্র জানায়, কক্সবাজারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ইসলামাবাদে পাঠানো হলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। এরপর সৈয়দ মারুফ তার সহচরী নারী ও বন্ধুকে ফেলে একাই গাড়িযোগে ঢাকায় ফিরে যান।
‘ব্যক্তিগত সফর’ না ভিন্ন কিছু?
হাফিজা হক শাহ দাবি করেছেন, এটি নিছকই একটি ব্যক্তিগত সফর ছিলো। তিনি বলেন, পাকিস্তানের হাইকমিশনার আমার পূর্বপরিচিত। তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আমি কক্সবাজারে আমার কাজিনদের নিয়ে গিয়েছিলাম, আর ওনার সঙ্গে হোটেলের লবিতে দেখা হয়েছে। একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়টি মিথ্যা।
তবে, ‘সবার দেশ’–এর হাতে আসা টিকিটে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—হাইকমিশনারের সফরে পরিবারের কোনও সদস্য ছিলেন না, ছিলেন কেবল তার ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ। ঢাকায় ফেরার টিকিটেও একই চিত্র। ফলে হাফিজার বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের ব্যবধান থেকেই যাচ্ছে।
তলব, প্রত্যাবর্তন, এবং কূটনৈতিক পরিণতি
সূত্র জানায়, হাইকমিশনার কক্সবাজারে অবস্থানকালেই তলব পান। সফরকালীন তার কর্মকাণ্ড ও সফরসঙ্গী নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট ইসলামাবাদে পৌঁছালে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপর সৈয়দ মারুফ পূর্বনির্ধারিত ফিরতি টিকিটের সময়ের আগেই, ব্যক্তিগত গাড়িতে কক্সবাজার ত্যাগ করেন এবং রোববার রাতে পাকিস্তান ফিরে যান।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরকারি কাজে পাকিস্তানে গেছেন। তবে কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূতরা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজ দেশে গেলে সাধারণত একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি, বরং ঘটনার পরপরই তিনজনের সফর নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে
এ সফরের পেছনে কী ছিলো? রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক সরকারি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা কতটুকু কূটনৈতিক শিষ্টাচারসম্মত? কক্সবাজার সফর কি নিছকই বন্ধুত্বের ছায়াতলে ছুটি, নাকি তার আড়ালে রয়েছে গভীর কোনো রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বার্তা?
সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে সৈয়দ আহমেদ মারুফের এ আকস্মিক প্রস্থান কেবল এক ব্যক্তির বিদায় নয়, বরং একটি কূটনৈতিক ঘটনার সূচনা, যা আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
সবার দেশ/কেএম