আজিম-বৃষ্টির পর্ণো তারকা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প

অর্থকষ্টের চাপে গড়া সংসার এক সময় তাদের ঠেলে দেয় এমন এক অন্ধকার জগতে, যেখানে দ্রুত অর্থ আসে, কিন্তু নেমে আসে আইন ও নৈতিকতার চরম ঝুঁকি। চট্টগ্রামের আজিম ও মানিকগঞ্জের বৃষ্টি—দুজনের বয়সই ২৮ বছর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর আগেই জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাদের ঘিরে ফেলে। সংসারের অভাব মেটাতে তারা নিজেরাই শুরু করে পর্ণো  ভিডিও তৈরি ও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ।

প্রথমে টাকার জন্য, পরে জনপ্রিয়তার নেশায়। ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক পর্ণো  প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয় তাদের প্রথম ভিডিও। অল্প সময়েই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর একের পর এক ভিডিও প্রকাশ করতে থাকেন তারা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তাদের প্রকাশিত ১১২টি ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ বারেরও বেশি। এ অজানা খ্যাতি আর বিপুল অর্থ তাদের জীবন বদলে দেয়। শুরু হয় বিলাসবহুল জীবনযাপন—দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, দামি মোবাইল ও ক্যামেরা, বিদেশি পোশাকে সাজানো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল।

২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ আন্তর্জাতিক পর্ণো  পারফর্মারদের মধ্যে তাদের অবস্থান ছিলো অষ্টম স্থানে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ উঠেছে, শুধু নিজেরাই নয়—তারা আরও অনেককেই এ বেআইনি অঙ্গনে টেনে আনতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রলোভন দেখিয়ে নতুনদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতো, এমনকি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতো—‘নতুন সদস্য আনলে নগদ অর্থ পুরস্কার।’

এ অবৈধ নেটওয়ার্কের কর্মকাণ্ড নজরে আসে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ও এলআইসি ইউনিটের। সোমবার ভোরে বান্দরবান সদরের রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে আজিম-বৃষ্টি দম্পতিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ট্রাইপড, সিমকার্ডসহ ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, এ দম্পতি একাধিক আন্তর্জাতিক পর্ণো  ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলি প্রচারণা চালাতো। তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামে সক্রিয় ছিলো এবং এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অন্যদের এ অন্ধকার জগতে টেনে আনতো।

বান্দরবানের ভাড়া বাসাটিও ছিলো ভুয়া পরিচয়ে নেয়া। ভবনের ম্যানেজার সৌরভ জানান, ১৩ অক্টোবর ফল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে তারা মাসে দশ হাজার টাকায় বাসাটি ভাড়া নেয়। নিয়মমতো জাতীয় পরিচয়পত্রও জমা দিয়েছিলো। প্রতিদিন হেলমেট পরে বাইরে যেতো, আচরণে কখনও সন্দেহ জাগেনি।

গ্রেফতারের সময় তারা আত্মীয় পরিচয়ে এক ব্যক্তির উপস্থিতি দাবি করলেও পুলিশ মনে করছে, সে তাদের সহযোগী হতে পারে। এখন সে দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে এনে পুরো চক্রের সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

দরিদ্রতা থেকে পর্ণো সাইটে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে উঠে আসা এ দম্পতির গল্প এখন নেমে এসেছে আইনের জালে—যা শুধু অপরাধের নয়, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়েরও এক সতর্কবার্তা।

সবার দেশ/কেএম