প্লট কেলেঙ্কারি মামলায় নতুন অভিযোগ
মা–বোন–ভাইকে প্লট বরাদ্দে হাসিনাকে চাপ দেন টিউলিপ
পূর্বাচলে রাজউক প্লট বরাদ্দ দুর্নীতির চতুর্থ মামলার রায় ঘোষণার আগে দুদকের অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে নতুন তথ্য। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নিজ নামে বরাদ্দ না থাকলেও যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক তার মা–বোন–ভাইকে প্লট দেয়ার ব্যাপারে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন এবং খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন।
দুদকের চার্জশিটে বলা হয়, টিউলিপ জানতে পারেন শেখ হাসিনা নিজে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে প্রত্যেকে ১০ কাঠা করে প্লট নিচ্ছেন। তখন তিনি সংসদ সদস্যের পদ ব্যবহার করে তার মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে একই প্রকল্পে প্লট নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন।
এ অভিযোগের ভিত্তিতেই প্লটগ্রহীতা হিসেবে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ রেহানাকে, দ্বিতীয় আসামি টিউলিপ সিদ্দিক এবং তৃতীয় আসামি শেখ হাসিনাকে। মামলার মোট আসামি ১৭ জন।
সোমবার রায়, সাজা হলে টিউলিপের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে
রাজধানীর বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম আগামী সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ মামলার রায় দেবেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে। রায় নেতিবাচক হলে শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিক দুজনই নতুন করে সাজার মুখোমুখি হতে পারেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো উল্লেখ করছে—সাজার রায় হলে টিউলিপকে সংসদ সদস্য পদ নিয়েও চাপে পড়তে হতে পারে।
এর আগে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় গত ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই মামলায় তার সন্তান সজীব ও সায়মাকে ৫ বছর করে সাজার আদেশ আসে।
চার্জশিটে আরও যাদের নাম
প্লট বরাদ্দ, নথি গায়েব ও ক্ষমতার অপব্যবহারে সহযোগিতার অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন আরও ১৪ জন সরকারি কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
- প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার
- সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার
- অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ
- সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন
- রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলম (একমাত্র আটক আসামি)
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়, রাজউক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা আসামির তালিকায় রয়েছেন। বাকিরা পলাতক, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের আপত্তি
টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবীদের একটি গ্রুপ। সাবেক বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কেসি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভে স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, টিউলিপকে অভিযোগ জানানো হয়নি, আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগও দেয়া হয়নি—যা তারা ‘কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বিচার প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেছেন।
এ মামলাটি দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের বড় পরীক্ষা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। রায়ে কী আসছে—সেটি এখন দেশের রাজনীতি থেকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
সবার দেশ/কেএম




























