জীবিত থাকা নিয়েও শঙ্কা পিটিআই নেতার
ইমরান খানকে নিয়ে ‘কিছু গোপন রাখা হচ্ছে’: ছেলে কাসিম
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থাকে ঘিরে রহস্য গভীরতর হচ্ছে। তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তার জীবিত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় পরিবার আশঙ্কা করছে, কর্তৃপক্ষ কিছু ‘অপরিবর্তনীয়’ সত্য গোপন করছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রয়টার্সকে দেয়া লিখিত মন্তব্যে ইমরানের ছেলে কাসিম খান এসব দাবি করেন।
কাসিম জানান, আদালতের আদেশ অনুযায়ী সাপ্তাহিক সাক্ষাতের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পরিবারের কেউ দীর্ঘদিন ধরে ইমরানের সঙ্গে সরাসরি বা যাচাইযোগ্য কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। পরিদর্শন স্থগিত থাকায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন,
কয়েক মাস ধরে স্বাধীনভাবে কোনো নিশ্চিত যোগাযোগ নেই। কেউ জানে না তিনি নিরাপদ কিনা, আহত কিনা—এমনকি আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। এটা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন।
পরিবার বলছে—গোপন রাখা হচ্ছে সত্য
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দী। ‘তোশাখানা’ দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া থেকে শুরু করে কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁসের অভিযোগে ১০ বছর ও আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় আরও ১৪ বছর কারাদণ্ডের মতো রায় তার বিরুদ্ধে চলছে একের পর এক। পিটিআই-এর দাবি—সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল, তাকে জনজীবন ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রয়াস।
কিন্তু ইমরানের কোনও হালনাগাদ দৃশ্য বা ফুটেজ নেই। টিভি চ্যানেলগুলোকে তার নাম-ছবি প্রচার থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আদালতে আনা হলে একঝলক দেখা যায়—এটাই তার শেষ দৃশ্যমান অস্তিত্ব। এ শূন্যতাই পরিবারকে ভাবাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
কাসিমের ভাষায়,
আজ আমরা তার অবস্থার কোনো যাচাইযোগ্য তথ্য জানি না। সবচেয়ে বড় ভয়—হয়তো কিছু লুকানো হচ্ছে, যা অপরিবর্তনীয়।
লন্ডনে থাকা দুই ছেলে বিচ্ছিন্ন, স্মৃতি হয়ে আছে শেষ সাক্ষাৎ
কাসিম ও বড় ভাই সুলেমান ঈসা খান মা জেমিমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে লন্ডনে থাকেন। রাজনীতির বাইরে থাকা সন্তানরা শেষবার বাবাকে দেখেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান সফরকালে।
কাসিম বলেন, সে দৃশ্য এখনও মনে গেঁথে আছে। মনে হয়েছিলো সময়ের সঙ্গে তিনি ভালো হয়ে উঠবেন। কিন্তু বর্তমানে সম্পূর্ণ নীরবতা—এখন সে স্মৃতির ওজন আরও ভারী।
পরিবার জানিয়েছে, বারবার চেষ্টা করেও ইমরানের ব্যক্তিগত চিকিৎসককে তার কাছে যেতে দেয়া হয়নি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা মূল্যায়নের অনুমতি বন্ধ।
জরুরি মানবাধিকার পরিস্থিতি দাবি করে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে পরিবার
কাসিম বলেন, এটা শুধু রাজনৈতিক বিরোধ নয়—এটি জরুরি মানবাধিকার সংকট। চাপ আসতে হবে সবদিক থেকে। আমরা তার কাছ থেকে শক্তি পাই, কিন্তু জানতে চাই—তিনি নিরাপদ তো?
রয়টার্সের প্রশ্নে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইমরান খান সুস্থ আছেন—কিন্তু তাকে উচ্চ-নিরাপত্তা কেন্দ্রে স্থানান্তর হবে কি না, সে বিষয়ে তার জানা নেই।
পরিবার এখন আদালত নির্দেশ পুনর্বহালের দাবি করেছে ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ইমরান খানকে নিয়ে অনিশ্চয়তা যত বাড়ছে, ততই জোরালো হচ্ছে প্রশ্ন—এ শুধু বিচ্ছিন্নতা, নাকি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য আড়াল করে রাখা হচ্ছে?
সবার দেশ/কেএম




























