প্রবন্ধ
জান্নাতুল বাকী ও প্রসঙ্গান্তর

(১০ম র্পব)
আলেম সমাজের হাতে আমাদের ইসলাম ধর্মের হালসহ সব কলকাঠি তাঁদের হাতে ধর্মের হাল বারবার বেহাল হয়ে পড়ায় সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে আমাদের সুধী সমাজ। সুধী সমাজের কেউ কেউ থিতিয়ে পড়া আলেমদের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে নবী-রাসূলদের সাথে বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে দিয়েছে। রাসূল (স.) বলে গেছেন: ‘নিশ্চয়ই আলিমগণ নবীদের ওয়ারিশ। নিশ্চয়ই নবীগণ কোনো দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকার রেখে যায় না। নিশ্চয়ই তাঁরা উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন ইলমের। আমাদের নবী করিম (স.) যে আলেমদেরকে তাঁর ওয়ারিশ হিসেবে স্বীকার করে গেছেন সে আলেমদের বিরুদ্ধাচরণ করা পক্ষান্তরে নবী-রাসূলদের সাথে বিরুদ্ধাচরণের সামীল হয়ে যায়।
যে ভুলটি সুধী সমাজ এখন শুরু করেছে সে ভুলটি আলেম সমাজ করতে শুরু করেছিল বহুদিন পূর্ব থেকে। আর এসব কারণেই একদিন যে ওলামা-এলেম শ্রেণী থেকে দেশের প্রধান বিচারপতি (হোজ্জাতুল কাজী) নিয়োগ করা হতো আজ তাদেরকে গাঁও-গেরামের সাধারণ মুরগি মারার শালিসেও ডাকা হয় না। থিতিয়ে পড়া ওলামা-এলেমগণ তাদের গৌরবান্বিত অতীত পুনরুদ্ধারের জন্য প্রকৃত পথে না হেঁটে ডেঞ্জার অ্যান্ড ডেস্পারেট হয়ে ধর্মকে বর্ম হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে।
তাই মদিনার কেন্দ্রে মসজিদে নববীর সাথে নবী (স.)-এর পরিবারের চিহ্নিত সমাধিগুলো শিরকের অজুহাতে নিশ্চিহ্ন করা ক্ষমতাসীন আরবদের ক্ষমতায় টিকে থাকার পূর্ববর্তীদের ধারাবাহিকতারই রুটিন ওয়ার্ক কিনা তা ইতিহাস বলে দিবে। তবে সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, অপরকে নির্মূল করতে গিয়ে নিজে নির্মূল হতে হয় আরবদের ইতিহাস তো বারবার এ কথাই বলছে।
আন্দোলনকারীগণ শুধু জান্নাতুল বাকীর সমাধিসমূহ ভাংচুর করে ক্ষান্ত হয়নি, সারাদেশসহ কা’বার কাছাকাছি মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ গোরস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লা নামক স্থানে খাজা ওসমান হারুনীর কবরটিও ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছে। মদিনা মসজিদে নববীর ভেতর অবস্থিত হযরত মুহাম্মদ (স.), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও হযরত ওমর (রা.) এ তিনটি সমাধি ছাড়া সারা আরবের কোনো সমাধিই ওহাবী আন্দোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। আমরা নবী করিম (স.)-এর সমাধি দর্শন করতে গিয়ে নববী মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথে বামদিকে ছিদ্রযুক্ত তিনটি পিতলের চাকতি দর্শন করতে পেরেছি মাত্র। প্রথম ও বড় চাকতিটি নবী করিম (স.) এবং অপর দুটি যথাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও হযরত ওমর (রা.)-এর সমাধি চিহ্নিত করে। বলা হয়, ছিদ্রযুক্ত পিতলের চাকতির পেছনেই তাঁদের পবিত্র সমাধি।
এতক্ষণ ইতিহাস বর্ণনা শেষ করে সাথী নজরুলকে খোঁচা দিয়ে বললাম-
যে কোনো কথায় নাক গলানো মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। আর মানুষটা যদি হয় বাঙালি তা হলে তো আর কোনো কথাই চলে না। বাঙালিয়ানার সেই চিরাচরিত অভ্যাস থেকে নাক গলিয়ে শেষ বারের মতো বলছি- কবরের পাথুরে প্রতীকগুলো চুরমার না করে বিশেষ বিশেষ কবরের পাশে নিরাপদ দূরত্বে গ্রিলের বেষ্টনী দেয়াল করে দেওয়া যেতো। কবর পূজা থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে গিয়ে কবর নিশ্চিহ্ন করে ফেলাটা মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার সামিল হয়েছে।
মনে রেখো, 'ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা, বিন্দু বিন্দু জল, তিল-তিল করে সাগর-মহাদেশ গড়ে তোলে। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.) প্রবর্তিত ধর্ম ছিল একেশ্বরবাদী। তারা আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করে মানুষকে ইহকাল ও পরকালে শান্তির পথ প্রদর্শন করে গেছেন। শান্তির পাদপীঠ হিসেবে নির্মাণ করে যান কা'বাগৃহ। এক সময় ইহুদি, খ্রিস্টানসহ সকলের কাছে কা'বাগৃহ মিলন কেন্দ্র হয়ে ওঠে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.) কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম কালের পরিক্রমায় বিন্দু বিন্দু করে বিচ্যুত হতে শুরু করে। বিন্দু বিন্দু বিচ্যুতি মিলে একদিন মহাভুলের এক মহাসাগরে রূপান্তর লাভ করে। ইব্রাহীম (আ.) কর্তৃক রোপিত ধর্মের বীজ থেকে যে ফল বের হয়েছে তা মূল ধর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত। হাসান আলী চৌধুরী কর্তৃক ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়-
‘হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং দীর্ঘযুগ পরে হযরত ঈসা (আ.) মানব সমাজে আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করে প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
ঈসা (আ.)-এর সময় কালের পরে আরব জাহান আবার ঘোর পৌত্তলিকতায় ফিরে যায়। তাদের ধর্মীয় জীবন ঘন তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।’
হাসান চৌধুরীর লেখা থেকে আরো জানা যায়-
‘ইহুদিগণ অজ্ঞতাবশত জোহাবাকে বিশ্বজগতের স্রষ্টা বা নিয়ন্তা মনে করতো। অপর পক্ষে খ্রিস্টানরা এক খোদার পরিবর্তে তিন খোদায় বিশ্বাসী ছিল। তাদের মতে আল্লাহর স্ত্রী ছিলেন বিবি মরিয়ম এবং ঈসা (আ.) ছিলেন আল্লাহর ছেলে।
ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্ম আরবের নৈতিক ও পার্থিব অবস্থার উপর কোনো প্রকার মঙ্গলজনক প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বাকি সমগ্র আরববাসী ছিল মূর্তি উপাসক এবং প্রকৃতি পূজারী। তারা ইচ্ছানুযায়ী দেব-দেবী প্রস্তুত করে সেগুলোর পূজা করতো। তারা চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, প্রস্তর খন্ড এবং বৃক্ষরাজিকেও পূজা করতো। ভ‚ত-প্রেতাদি ও অশরীরী প্রাণীর উপরও তাদের অগাধ বিশ্বাস ছিল। যে কা’বাগৃহ হযরত ইব্রাহীম (আ.) একমাত্র নিরাকার আল্লাহ পাকের উপাসনার জন্য নির্মাণ করেছিলেন, সে গৃহে পৌত্তলিক আরববাসী কালক্রমে ৩৬০টি দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করেছিল। তারা হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মরিয়মের মূর্তিও কা'বাগৃহে স্থাপন করেছিল। প্রতি বছর তারা ঐসব দেব- দেবীকে অর্ঘ্য দিতে আসতো এবং দেবতার মনতুষ্টির জন্য নরবলী দিত এবং এ উপলক্ষে সেখানে ‘ওকাজ মেলা’ নামে এক বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হতো।’
একেশ্বরবাদটি কালের বিবর্তনে বিবর্তিত হয়ে কখন যে বহু ঈশ্বরবাদে রূপান্তরিত হয়ে খোদ কা’বাগৃহে ৩৬০টি মূর্তি ঠাঁই পেয়েছিল তা কেউ টের পায়নি। মুহাম্মদ (স.)-এর জন্ম না হলে ইব্রাহীম (আ.) ও ঈশা (আ.) প্রবর্তিত একত্ববাদটি হয়তো কেয়ামত পর্যন্ত অনুৎঘাটিতই থেকে যেতো।
- তখনকার পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ এক নয়। তখনকার দিনে ধর্মের কোনো লিখিত প্রমাণ বা দলিল-দস্তাবেজ না থাকায় এমনটা হয়েছিল। আর এখন রয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রমাণ ও দলিল-দস্তাবেজ। প্রথম দিকে হযরত (স.)-এর সাহাবীগণ কোরআনের বাণী মুখস্ত রাখতেন ও খেজুর পাতা ও পাথরের গায়ে লিখে রাখতেন।
-পবিত্র কোরআনুল করিম সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তনীয় অকাট্য ও অলঙ্ঘীয়। এটাও স্বীকার করি, কোরআনুল করিম শুধু ইহলোক ও পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য আদেশ-নির্দেশ আর উপদেশবাণীর সমন্বয় নয়। পবিত্র কোরআনের ভাব, ভাষা, ছন্দ ও অলংকার অতুলনীয়, উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর। শুধু অলংকার অলংকরণ সমৃদ্ধই নয়, কোরআনের সুর, তাল, লয় ও মাত্রা এমন জুৎসইভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে যা সর্বশ্রেষ্ঠ আরব সাহিত্যিকগণ দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পরেও বিভেদ-বিচ্যুতি বের করতে পারেননি।
এই পর্যন্ত বিশ্বশ্রেষ্ঠ আরব কবি-সাহিত্যিকের কোনো সৃষ্টিই কোরআনের মতো তেজ, স্টাইল, কলা ও ওজঃগুণ সম্পন্ন হয়নি- শুধু ভাব-ভাষা আর অলংকারের দিক থেকেই নয়, প্রজ্ঞাপরিমিত কোরআনুল করিমের রূপ মণিকার অনুপম ঐশ্বর্য অর্থ ও আদেশ-নির্দেশের সমাহারে রয়েছে শাশ্বত সুখ-স্বস্তি ও নিরাপত্তা। কোরআন শুধু পরকালের মুক্তির পথ প্রদর্শন করে না- কোরআনুল করিম মানবের পূর্ণাঙ্গ জীবনের পথ প্রদর্শক। আর. এ. নিকলসন বলেন-
‘কুরআনের বিশুদ্ধ ভাষা এবং চমৎকার রীতি কোনো মানব প্রতিভার পক্ষে অনুকরণ বা রচনা করা সম্ভব নয়।’
ড. মাউরিজ বলেন- ‘কোরআন বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য একটি শব্দকোষ, ব্যাকরণবিদদের জন্য একটি ব্যাকরণ, কবিদের জন্য একটি কাব্য এবং আইন ও তার প্রণেতাগণের জন্য একটি বিশ্বকোষ।
এতক্ষণ কোরআনুল করিমের শব্দ, বাক্য ও রচনা তত্তে¡র চিত্ত উদ্দীপ্তকর রীতি প্রকৃতি বা ওজঃ গুণ সম্পর্কে শুনলেন। এবার শুনুন এর আধ্যাত্মিক রহস্য, অক্ষর ও সংখ্যা তত্তে¡র অলৌকিকতা সম্পর্কে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ অক্ষর ও সংখ্যা তত্তে¡র অলৌকিক পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন রচনা করেছেন। বিশ্বব্যাপী কোরআন নিয়ে যতোই গবেষণা হচ্ছে ততোই এর নতুন নতুন অলৌকিক দিক বের হয়ে আসছে।
আধুনিক বিশ্বের বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। বিস্ময়কর যন্ত্রটি দিয়ে ততোধিক বিস্ময়কর এক গাণিতিক হিসাব বের হয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারিম-এর লেখা থেকে। ‘১৯' (উনিশ) এর সূ² গাণিতিক বাঁধন দিয়ে কোরআনের প্রতিটি শব্দ ও অক্ষরকে পরস্পরের সাথে এমন নিবিড়ভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে যা থেকে একটি অক্ষর এদিক-সেদিন করতে গেলেই ধরা পড়ে যাবে। লেবাননের অধিবাসী জনাব ড. রাশীদ খলিফা মিশরী সর্বপ্রথম কম্পিউটারে সমস্ত কোরআনকে অক্ষর ও সংখ্যা তাত্তি¡ক প্রতীক চিহ্ন স্থাপন করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌলিক সংখ্যা ‘১৯ (উনিশ)'-এর বিস্ময়কর ও অলৌকিক সূত্রটি আবিষ্কার করেন। কোরআনুল করিমের ৭৪ নং সূরার ৩০ নং আয়াতে ‘আলাইহা-তিস’আতা ‘আশার’ যার অর্থ ‘সেখানে মোতায়েন আছে উনিশ জন প্রহরী'। পবিত্র কোরআনুল কারিমে রয়েছে এ উনিশ প্রহরীর রহস্যজনক অবস্থান। কোরআনের অর্থ ছাড়াও এর ভাব, ভাষা ও ছন্দ আধুনিক কম্পিউটারের মাধ্যমে যতোই গবেষণা করা হচ্ছে গবেষকগণ এর বিস্ময়কর ফলাফল দেখে ততোই অভিভ‚ত হচ্ছেন। যেমন :
প্রথম বিস্ময়: কোরআনুল করিমের এই রহস্যময় ১৯ প্রহরী সংক্রান্ত আয়াতটি নাজেল হওয়ার পর মুহূর্তেই বিস্ মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' এই আয়াত সহকারে সূরায়ে আল-ফাতেহা যা প্রারম্ভিক সূরা হিসেবে স্থাপিত হয়। ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)' বা 'বিসিমল্লাহ ---- রাহিম' এর সাথে এই রহস্যময় ১৯ প্রহরীর একটি সূ²তম সম্পর্ক রয়েছে। সূরায়ে আল-ফাতেহার মতো একই সময়ে সূরায়ে ‘তওবা' ব্যতীত প্রত্যেক সূরার আগে ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি) লেখা হয়েছে। 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম্' সূরার মধ্যে আরবি ১৯ টি অক্ষর রয়েছে। ১৯ টি অক্ষর দিয়ে 'ইসম', ‘আল্লাহ্’, ‘আররাহ্মান’ ও ‘আররাহিম' নামীয় ৪টি বিশেষ শব্দকে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘ইসম’, ‘আল্লাহ্’, ‘আররামান’ ও ‘আররাহিম' নামীয় ৪টি শব্দ পবিত্র কোরআনুল করিম-এ যথাক্রমে ১৯, ২৬৯৮, ৫৭ ও ১১৪ বার ব্যবহৃত হয়েছে। ‘১৯, ২৬৯৮, ৫৭ ও ১১৪' প্রতিটি অংক ‘১৯’ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য।
দ্বিতীয় বিস্ময়: আল্লাহর নিকট থেকে সর্বপ্রথম সূরার নাম সূরায়ে ‘ইকরা’ বা সূরায়ে ‘আ-আলাক'। এই সূরায় মোট আয়াতের সংখ্যা ১৯ এবং পেছন দিক থেকে গণনা করলে এই সূরার অবস্থান সংখ্যাও ১৯।
তৃতীয় বিস্ময় : ‘আলিফ্ লা--ম্ মী--ম' রহস্যকর প্রতীক চিহ্নিত এই অক্ষরটি কোরআনুল করিমের সর্ব বৃহত্তম সূরা আল-বাকারাহ্-এর প্রথম বা ১নং আয়াত। নুক্তা বিহীন প্রতীকধর্মী এই মুকাত্তাআতটি পবিত্র কোরআনুল করিম-এর ২, ৩, ৭, ১৩, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নং (আটটি) সূরারও ১নং আয়াত। অনেকের মতে, আলিফ অর্থ 'আল্লাহ' লা-ম অর্থ ‘জিবরাইল' এবং মী-ম অর্থ 'মুহম্মদ (স.)'।
'আলিফ্“লা-ম্ ও মী-ম' প্রতীক দিয়ে যে আটটি সূরা শুরু হয়েছে সে আটটি সূরায় ‘আলিফ’, 'লা-ম্' ও 'মী--ম' এর সংখ্যা যথাক্রমে ১২,৩১২, ৫,৮৭১ ও ৮,৪৯৩ টি। ১২,৩১২, ৫,৮৭১ ও ৮,৪৯৩ প্রতিটি সংখ্যা ১৯ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। তিনটি সংখ্যার যোগফল ২৬,৬৭৬ সংখ্যাটিও ১৯ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। এ ছাড়াও একইভাবে নুক্তা বিহীন আরো যেসব প্রতীকি অক্ষর রয়েছে সেসব অক্ষর যুক্ত অনেক সূরার সাথে ‘১৯’ সংখ্যাটির রহস্যময় সংযোগ রয়েছে যা এই অল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধু কি তাই, বিশ্বনবীর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। '৫৭০' সংখ্যাটিও ১৯ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। আধুনিক কম্পিউটারের মাধ্যমে যতোই বিশ্লেষণ করা হয় পবিত্র কোরআনুল করিমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, অতি প্রাচুর্যময় ও অত্যধিক গুরুত্ব আরোপকারী ‘উনিশ' প্রহরীর অলৌকিক ও বিস্ময়কর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মহান স্রষ্টা তাঁর সূরায়ে বনী- ইসরাইল-এর ১৭ ও ৮৮ নং আয়াতে বলেন 'আপনি বলুন : যদি সমগ্র মানব ও জ্বীন জাতি একত্রিত হয়ে এই কোরআনের অনুরূপ আরো একটি কোরআন আনয়ন করার চেষ্টা করে, তবে তারা তা করতে পারবে না। যদিও তারা পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী হয়।
‘উনিশ’ প্রহরীর অলৌকিক ও বিস্ময়কর অস্তিত্ব দেখে বিশ্বের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, মহাবিশ্বের মহা বিস্ময়- মহা-মহিমান্বিত পবিত্র কোরআনুল করিম বিশ্বের বিস্ময়কর, অপার্থিব ও অলৌকিক সৃষ্টি। (চলবে,,,)
লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক