Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ জয়নুল আবেদীন


প্রকাশিত: ০২:২৬, ৭ মে ২০২৫

প্রবন্ধ

জান্নাতুল বাকী ও প্রসঙ্গান্তর

জান্নাতুল বাকী ও প্রসঙ্গান্তর
ছবি: সবার দেশ

(৮ম পর্ব)

যতদূর জানা যায় নবী করিম (স.)-এর সময়কাল থেকে জান্নাতুল বাকীতে নবী (স.) পরিবারের লোকদের সমাহিত করা হচ্ছিল। নবী করিম (স.)-এর পরলোকগমনকাল ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৭৯২ (ওয়াহাবের মৃত্যুকাল) খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১১৬০ বছর। কম-বেশি সাড়ে এগার'শ বছর সময় কালের মধ্যে ইসলামের চার খলিফা, জগৎ বিখ্যাত মুসলিম মহামনীষী ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম হাসান আসকারী, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালি, যুগের শ্রেষ্ঠ তাপস ও অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন অলি হযরত আব্দুল কাদির মুহিউদ্দিন জিলানী (র.), তাপস ও শ্রেষ্ঠ অলি হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি (র.)সহ হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম নোমান বিন আবু হানিফা (৭০০- ৭৯৪ খ্রি:), মালিকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইবনে আনাস (৭১৩– ৭৯৫ খ্রি:), শাফেয়ী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আল শাফেয়ী (জন্ম : ৭৬৭ খ্রি:) ও হাম্বলী মাযহাবের জনক আহম্মদ বিন হাম্বল (৭৮০- ৮৫৫ খ্রি:) এ মাজহাব চতুষ্টয়ের চারজন ইমাম যাদের জীবনের বেশকিছু সময় কেটেছে মক্কা ও মদিনায়। জান্নাতুল বাকীর সমাধিগুলো তারাও যিয়ারত করে গেছেন। 

তাদের চলা হাজার বছরের পথ পরিক্রমা কি ভুল পথ ছিল? তাঁদের সবাই কি হাজার বছর ধরে ভুল পথে চলেছিল? আমার ধারণা, সমাধি ভাঙার বিষয়টির পেছনে ধর্মীয় দিকের চেয়ে রাজনৈতিক কারণ বেশি কাজ করেছে। আহলে বাইয়েত, ইজমা-কিয়াসসহ চার ইমামের প্রবর্তিত ‘আহল আল-সুন্নাহ আল জামায়াৎ'কে বিলুপ্ত কিংবা অর্থহীন করার নীলনক্সার অংশ হিসেবেই তাদের সমাধিফলক নিশ্চিহ্ন করা হয়ে থাকতে পারে। এর বাস্তব প্রতিফলন কা'বার মাঠে নামাযীদের বেলায় ফরজ আদায়ের জন্য যত বাধ্যবাধকতা সুন্নত ও নফল নামায আদায়ে তত বাধ্যবাধকতা নেই। শুক্রবারের জুম্মার নামাযের বেলায়ও একই অবস্থা, ইমামের পেছনে দু'রাকাত নামায আদায় করার পর নামাযী গিজগিজ করা কা'বার মাঠ শূন্য হয়ে পড়ে। মসজিদে প্রবেশ থেকে শুরু করে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের ভেতর যে ভয়-ভীতি ও আন্তরিকতা থাকে সে ভয়-ভীতি ও আন্তরিকতা তাদের মাঝে নেই বললেই চলে।

আইনী ধর্ম আর আত্মিক ধর্ম এক নয়। আত্মিক ধর্ম যেদিন থেকে আইনী ধর্মে পরিণত হয়েছে সেদিন থেকে ধর্মালয় সম্পর্কে ভয়-ভীতিসহ আন্তরিকতাও লোপ পেতে শুরু করেছে। রাসূলের তিরোধানের অল্পকাল পরেই উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮৯ বছর (৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রি.) তারা মুসলিম রাজ্য শাসন করে। উমাইয়াগণ ছিল এলমে মারেফাতের জ্ঞান বিবর্জিত। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যে, এরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কোনো কাজ করতে পারতো, তাতে তারা ন্যায়-অন্যায়, ধর্মাধর্ম, পাপ-পুণ্য ও নৈতিক- অনৈতিক সকল ভেদাভেদ ভুলে যেতো। বিশেষ করে রেসালত প্রকাশে প্রারম্ভ থেকে তারা ছিল রাসূলের (স.) ঘোর বিরোধী। এরাই রাসূল (স.)-এর সকল যুদ্ধের মূল হোতা। এরা পরাজিত হয়ে মক্কা বিজয়ের সময় সাধারণ ক্ষমার অন্ত র্ভুক্ত হয় এবং ইসলাম গ্রহণ করে জীবন রক্ষা করে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অন্তঃজ্বালা কখনো প্রশমিত হয়নি। শুধু মুসলিম জাহানের শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদের ইসলাম ছিল লোক দেখানো ও মৌখিক। আর লোক দেখানোর প্রকৃষ্ট উপায় হলো শরিয়ত। কাজেই মানুষ তাদেরকে ঈমানদার বলেই মনে করতো। তাদের রাজত্বের অনুক‚ল অবস্থা সৃষ্টির জন্য ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করে টাকার বিনিময়ে হাদিস রচনা করিয়ে তা রাজ্যময় ছড়িয়ে দিত। এ কারণেই ২৩ লক্ষ হাদিস থেকে সিয়াসিত্তায় মাত্র ২৩,৪২৬ টি হাদিস অর্থাৎ এক পার্সেন্ট হাদিস গৃহীত হয়েছে। বাকি নিরানব্বই পার্সেন্ট মিথ্যা ও বানোয়াট প্রমাণিত হয়েছে। এলমে মারফতের একটা শর্ত হলো, রাসূল (স.) ও তাঁর আহলে বাইয়েতের প্রতি অগাধ ভালবাসা। নবী করিম (স.)-এর বক্তব্যেও এ নির্দেশ রয়েছে। 

কিন্তু রাসূল প্রেমিকদের প্রতি উমাইয়ারা ছিল খড়গহস্ত। অত্যাচার, নিপীড়ন, গুপ্তহত্যার শিকার- এসব ছিল রাসূল প্রেমিকদের নিত্যদিনের বিষয়। আহলে বাইয়েতের প্রতি অমানুষিক নির্যাতন, গোপনে তাদের হত্যা করা এবং মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে আহলে বাইয়েতের উপর অভিসম্পাত দেওয়াÑ এগুলো ছিল উমাইয়াদের নিত্যদিনের রুটিন।'

এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় ইসলামের ইতিহাসেও। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে কুফার মসজিদে আব্বাসীয় বংশের আবুল আব্বাসকে খলিফা বলে ঘোষণার মাধ্যমে উমাইয়া বংশের পতন সম্পন্ন হয়। আবুল আব্বাস ক্ষমতায় বসে সকল প্রকার শত্রু ও সন্দেহভাজনদের হত্যা করতে শুরু করে। দেশে যতো উমাইয়া ছিল সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জীবিত উমাইয়াদের হত্যালীলা শেষ করে মৃত উমাইয়াদের কবর খনন করে হাড় ও ধ্বংসাবশেষ উত্তোলন করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। চার বছর তিন মাস রাজত্ব করার পর বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩০ বছর বয়সে আবুল আব্বাস প্রাণ ত্যাগ করেন। আব্বাসের মৃত্যুর পর তৎভ্রাতা আবু জাফর ‘আল মনসুর’ উপাধি ধারণ করে শাসনভার গ্রহণ করেন। 

উমাইয়া বংশ নির্বংশ করার পর তার নজর পড়ে ফাতিমীয় বংশের দিকে। তখনও দেশের সাধারণ মানুষের অঢেল ভক্তি-বিশ্বাস ছিল নবী করিম (স.)-এর ঔরসজাত ফাতিমীয়দের ওপর। তাই উমাইয়া বিরোধীগণ তাদের আন্দোলন বেগবান করার জন্য ফাতিমীয়দের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিল। উমাইয়াদের পতন আসন্ন হলে আব্বাসীয় আন্দোলন পরিচালনার জন্য মদিনায় একটি সভা হয়েছিল। উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় যে, উমাইয়াদের পতনের পর ইমাম হাসানের প্রপৌত্র মুহম্মদ খলিফা হবেন। মনসুর নিজেও মুহম্মদের হাত ধরে বায়েত হয়েছিলেন।

উমাইয়াদের পতনের পর মুহম্মদের বিনা প্রতিবাদে আবুল মনসুর খিলাফত দখল করলেও প্রতিশ্রুতির কথা ভুলেননি। একদিকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ আর অপরদিকে নবী (স.)-এর বংশধর- সর্বোপরি আলীর বংশধরদের উপর জনসাধারণের অসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধার জন্য খলিফা মনসুর বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের ধ্বংস সাধনে তৎপর হয়ে ওঠেন। মনসুরের কার্যকলাপের প্রতিবাদের মিথ্যা অযুহাতে ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের নাম করে বাহিনী পাঠিয়ে মুহম্মদকে হত্যা করা হয়। ইমাম হাসান হোসেনের বংশধরদের বাড়িঘর ক্ষেত-খামার ভষ্মীভ‚ত করণসহ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিককেও কারারুদ্ধ করে চাবুক মারা হয়। মনসুরের চাচা আবুল আব্বাস যেভাবে উমাইয়াদের নির্মূল করেছিল সেভাবে আব্বাসীয়গণও হযরত আলী (ক.)-এর বংশ-নির্বংশ করতে শুরু করে। 

আব্বাসীয় খলিফাগণ ফাতিমীদের নির্বংশ করার সাথে সাথে রাসূল (স.)-এর প্রচারিত ধর্ম পরিবর্তনে মনোযোগ দেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি উন্নয়ন কর্মকাÐের পরিপন্থী বলে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থার নামে ভাল-মন্দ বিচারে মানুষ স্বাধীন। ‘আল্লাহর গুণাবলি তাঁর অস্তিত্ব হতে পৃথক নয় এবং কোরআন শরীফ সৃষ্ট, এটি অনাদি নয়' মর্মে নিজস্ব মতবাদ প্রচার করতে শুরু করে। ইমাম হাম্মলসহ আরো কয়েকজন এই প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হয়।

তখন মুসলিম জাহানে কাজীর দরবারে শরিয়তের বিচারের দোহাই দিয়ে কিভাবে আধুনিক চিন্তাবিদ, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ও সুফি-সাধকদের নির্যাতনে নির্যাতনে নিশ্চিহ্ন করা হতো তার চিত্র ইরাকের যুগশ্রেষ্ঠ কবি ও জ্যোতির্বিদ ‘ওমর খাইয়ামের সমরকন্দ' থেকে নিচের অংশটুকু পাঠ করলেই উপলব্ধি করা যাবে। ১০৭২ খ্রিস্টাব্দ। আব্বাসীয় খলিফা মালিক শাহের শাসনকাল। সমরকন্দের হুজ্জাতুল কাজী, নাম আবু তাহের। ওমর খাইয়ামের ভাষায় দেখা যাক তৎকালীন সমাজ ও বিচার ব্যবস্থার চিত্রটি :
‘একটি শোরগোলের প্রতি তাঁর মনোযোগ আকৃষ্ট হলো এবং সে সেদিকে এগিয়ে গেলেন দ্রুত পায়ে। শিগগির সে উপস্থিত হলো উত্তেজিত জনতার মাঝে। দেখেন হাড্ডিসার বৃদ্ধ লোকটি ততোক্ষণে মাটিতে পড়ে গেছে। তার টাকের উপর ছড়িয়ে আছে অবশিষ্ট পাকা কয়েক গাছি চুল। তার মুখাবয়বে ভয় ও আতঙ্ক প্রলম্বিত কান্না ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। মাটিতে পড়ে থাকা লোকটি নবাগতের দিকে চেয়ে রয়েছে। তার করুণ চাহনিতে আকুতি।

হতভাগা লোকটিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে বেশকিছু শ্মশ্রুমন্ডিত লোক, যারা লোকটির ওপর অনেকক্ষণ ধরে নির্যাতন করছে। তাদের অনেকে খানিকটা দূরে। কয়েকজন লোকটির দুরবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে। তাদের একজন খৈয়ামের চেহারায় ভীতির প্রকাশ দেখে তার প্রতি আশ্বাসের সুরে বলে উঠলো,
‘আপনি ঘাবড়াবেন না। লোকটি জাবের।' ওমর লজ্জায় সংকোচিত হয়ে পড়লেন।
-‘জাবের আবু আলীর লোক।' আপন মনে বললো সে।

আবু আলী সকলের সাধারণ নামের একটি। কিন্তু বোখারা, বলখ, সমরকন্দ অথবা বাগদাদের কোনো শিক্ষিত লোক যখন নামটি পরিচিত পার্থক্যের সুরে উচ্চারণ করে তখন কারো মনে আর দ্বিধার অবকাশটুকুও থাকে না যে, তারা কার কথা বুঝাচ্ছে। ইনি আবু আলী ইবনে সিনা, আবিসিনা নামে যিনি বিশেষভাবে পরিচিত। ওমর তাকে দেখেনি, কারণ তাঁর জন্মের এগার বছর আগে আবু আলী মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু চিকিৎসা ও রসায়নবিদ্যায় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্ব›দ্বী, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যাপক, যুক্তির দূত হিসেবে তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করতেন।

খৈয়াম মনে মনে আবার বললো,
- জাবের! আবু আলীর প্রিয় শিষ্য জাবের!' এখন যদিও সে তাকে প্রথম বারের মতো দেখছে, কিন্তু তার ভাগ্যেও যে কত করুণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপমান জুটতে পারে সেসব সে জানতো না। আবিসিনার প্রিয় শিষ্য আবু জাবের। আবু ইবনে সিনা তাকে জানার পরই যথাশীঘ্র চিকিৎসাশাস্ত্র ও অধিবিদ্যার ক্ষেত্রে তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছিলেন। তিনি তাঁর যুক্তির ক্ষমতাকে প্রশংসা করতেন এবং শুধুমাত্র উদ্ধত ও স্থুলভাবে তার চিন্তাধারাকে ব্যাখ্যা করার কারণে তাকে মাঝে মাঝে বকুনি দিতেন। 

আবিসিনার মৃত্যুর পর জাবেরকে বেশ কয় বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে এবং তিন দফা গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে। শেষবার তাকে প্রহার করা হয় সমরকন্দের বিখ্যাত চত্বরে এবং তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সামনে একশ পঞ্চাশটি বেত্রাঘাত করা হয়। এই নির্যাতনের ধকল তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি ঠিক কোনো এক মুহূর্তে পাগলে পরিণত হওয়ার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। সন্দেহ নেই, তার স্ত্রীর মৃত্যুতে তাকে আর সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি, তাকে দেখা যেতো ছিন্নবস্ত্র পরিহিত অবস্থায়, উচ্চকণ্ঠে অসার কথাবার্তা বলতে বলতে ঘুরাফেরা করতো। তার পিছু নিতো ছেলে- ছোকরার দল, হাততালি দিতো এবং তার প্রতি পাথর ছুঁড়তো যতোক্ষণ পর্যন্ত না তিনি কেঁদে কেঁদে অশ্রু না ঝরাতেন। এই অবস্থা দেখে খৈয়াম আর নিজকে দূরে রাখতে পারলেন না। ভাবলেন-
‘আমি যদি সতর্ক না থাকি তা হলে আমাকেও এমন পরিণতি লাভ করতে হবে।’

মাতাল হয়ে পড়াকে সে খুব ভয় করতো না। বরং সে এবং মদিরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় এবং একটি যে অন্যটিকে কখনো হার মানাতে একদিন পারবে না, এটা তার ভয়ের কারণ ছিল। সে আশঙ্ক্ষা করতো যে, ক্রুদ্ধজনতা তাঁর শ্রদ্ধার প্রাচীরও গুড়িয়ে দেবে। সে ভ‚পাতিত লোকটির অবস্থা দেখে রীতিমতো ভীত হলো এবং এ অবস্থা থেকে নিজকে দূরে রাখতে চাইলো। অবশ্য সে জানতো যে, ক্ষুব্ধ জনতার হাতে আবিসিনার প্রিয় শিষ্যকে রক্ষা করতে পারবে না। তার পরেও সে গাম্ভীর্য নিয়ে ভিড়ের দিকে তিন পা কণ্ঠে বললেন, এগুলেন এবং দৃঢ়
-‘বেচারিকে ছেড়ে দিন।'

দলের নেতা মতোন একজন লোক যে জাবেরের ওপর ঝুঁকে ছিল, সে সোজা হয়ে অনুপ্রবেশকারীর সামনে এসে দাঁড়াল। লোকটির ডান কানের নিচ থেকে থুতনি পর্যন্ত একটি গভীর ক্ষতের দাগ এবং ওমরের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পড়তে সে রায় ঘোষণার মতো বললো,
“ফাইলাসুফ”। সমরকন্দে আমরা “ফাইলাসুফ” চাই না।
সমবেত জনতার মধ্য থেকেও সম্মতির গুঞ্জন উঠলো।’
-আমরাও ফাইলাসুফ চাই না।
‘ফিলোসোফার’ বা দার্শনিককে সমরকন্দে 'ফাইলাসুফ' বলা হয়। ইবনে সিনার প্রিয় সঙ্গী জাবের দর্শন চিন্তা করার অপরাধে খলিফার লোকেরা তাকে রাস্তাঘাটে নির্মমভাবে অপমান করতো। এই ঘটনার পরের চিত্র আরো করুণ। ওমর খাইয়াম এই নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ করার পরে জাবেরকে ছেড়ে ওমর খাইয়ামকে মারপিট শুরু করে। খাইয়ামের অপরাধ, সে অপবিত্র ও নোংড়া রুবাই লেখে। জনতার রোষানল থেকে কাজীর দরবারে তুলে নেয়া হয় খাইয়ামকে। সেদিন শরীয়তের কাজীর বিচারে অতি অল্পের জন্য ওমর খাইয়ামের গর্দান রক্ষা পেয়েছিল। (চলবে)

লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক

শীর্ষ সংবাদ:

পাকিস্তানের কড়া মার খেয়ে চুপসে গেলো গদি মিডিয়া
টানা ষষ্ঠবারের লিগ শিরোপা বার্সেলোনার মেয়েদের
৭ গোলের থ্রিলারে বার্সার শ্বাসরুদ্ধকর জয়
গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু
হোমনায় যুবলীগ নেতা গ্রেফতার, আতঙ্কে অন্য নেতাকর্মীরা
ঝড় ও বজ্রপাতে সারাদেশে ১৪ জনের মৃত্যু
পালিয়েছেন আবদুল হামিদ: পর্দার আড়ালে কী ডিল হলো?
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ বিএনপির দাবির প্রতিফলন: মির্জা ফখরুল
শেয়ারমার্কেটে আস্থা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টার ৫ নির্দেশনা
নতুন সংবিধান ছাড়া নতুন বাংলাদেশ নয়: নাহিদ ইসলাম
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার শুরু চলতি মাসেই
আ.লীগ নিষিদ্ধে ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় মা-মেয়ের মৃত্যু
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ৪৩ দল একাট্টা
২ ম্যাচ হেরেও বিশ্বকাপের টিকিট পেলো বাংলাদেশ নারী দল