দায়িত্বরত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সম্পূর্ণ নীরব
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাউসে উগ্র হিন্দুদের তাণ্ডব—হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাউসে (হাইকমিশনারের বাসভবন) হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামক একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে মূল ফটকের সামনে এসে তাণ্ডব চালায়। এ সময় তারা বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।
নজিরবিহীন এ ঘটনায় ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক মহলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন উগ্রবাদীর একটি দল ৪-৫টি গাড়িতে করে কূটনৈতিক এলাকা চাণক্যপুরীর সুরক্ষিত নিরাপত্তা বলয় অতিক্রম করে সরাসরি বাংলাদেশ হাউসের সামনে পৌঁছায়। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ বাংলাদেশবিরোধী স্লোগান দেয়। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এ সময় সেখানে দায়িত্বরত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করেন। বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়া বা সরিয়ে দেয়ার কোনও চেষ্টা তাদের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি। হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা সে সময় বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন এবং তারা দীর্ঘ সময় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাটান।
দিল্লির কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, চাণক্যপুরীর মতো অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত এলাকায় কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি বা যোগসাজশ ছাড়া এভাবে গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব। বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করার পর বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করে, যা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন চিহ্ন দাঁড় করিয়েছে।
এ নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন এবং হাইকমিশনারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ হিসেবে ভারতজুড়ে থাকা বাংলাদেশের মিশনগুলোতে ভিসা সার্ভিস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্তের কথা বিবেচনা করছে ঢাকা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব যখন তুঙ্গে, ঠিক সে সময়ে দিল্লিতে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। এর আগে গত বছর আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনেও একই ধরনের হামলা চালিয়ে তছনছ করা হয়েছিলো। গত কয়েক দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দূত তলব এবং সীমান্ত উত্তজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্পর্ক এখন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।
সবার দেশ/কেএম




























