Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৬ মে ২০২৫

‘কিংডম অব জার্মানি’ নিষিদ্ধ, রাজাসহ চার নেতা গ্রেফতার

‘ছায়া-রাষ্ট্র’ তৈরির অভিযোগে রাইখসবুর্গার শিবিরে অভিযান, ইহুদিবিদ্বেষী তত্ত্বের অপপ্রয়োগের অভিযোগ।

‘কিংডম অব জার্মানি’ নিষিদ্ধ, রাজাসহ চার নেতা গ্রেফতার
ছবি: সংগৃহীত

জার্মানিতে চরম ডানপন্থি গোষ্ঠী ‘কিংডম অব জার্মানি’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে সংগঠনের স্বঘোষিত ‘রাজা’ পেটার ফিটসেকসহ চার শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট শুক্রবার (১৬ মে) এক বিবৃতিতে জানান, গোষ্ঠীটি ‘ছায়া-রাষ্ট্র’ তৈরি করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং একটি অপরাধচক্রের মতো অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলে।

নিষেধাজ্ঞার পেছনে কারণ

ডোব্রিন্ডট বলেন, এ গোষ্ঠী শুধু রাষ্ট্রবিরোধীই নয়, বরং সরাসরি আইনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তারা কর দিতে অস্বীকার করে, নিজেরা পাসপোর্ট ছাপে, আর ‘রাজত্ব’ চালানোর নামে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে নিজেদের শাসনব্যবস্থা চালাতে চেয়েছে।

তিনি আরও জানান, গোষ্ঠীটি তাদের ‘কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার জন্য ইহুদিবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারে লিপ্ত ছিলো, যা জার্মানির ইতিহাস ও বর্তমান গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য হুমকি।

ব্যাপক অভিযান

বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ, লোয়ার সাক্সনি, নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া, রাইনল্যান্ড-পালাটিনেট, সাক্সনি, সাক্সনি-আনহাল্ট ও থুরিঙ্গিয়ায় একযোগে অভিযান চালিয়ে সংগঠনের মূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযান শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

‘কিংডম অব জার্মানি’ কে?

প্রায় ৬,০০০ সদস্যবিশিষ্ট এ গোষ্ঠী চরম ডানপন্থি ‘রাইখসবুর্গার আন্দোলনের’ একটি প্রধান শাখা। তারা আধুনিক জার্মানিকে অবৈধ মনে করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব জার্মান সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে সওয়াল করে।

তারা কর না দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের ‘রাষ্ট্র’ চালাতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামো পর্যন্ত গড়ে তোলে।

অতীত ষড়যন্ত্র ও বিচার

২০২২ সালের শেষদিকে জার্মানির পার্লামেন্টে হামলা চালিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পর এ গোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। তখন ২৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয় এবং ৩৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অন্তত তিনটি বৃহৎ বিচার প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছে, যেখানে মূলত রাইখসবুর্গারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

জার্মানির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাইখসবুর্গার গোষ্ঠী ও তাদের শাখা সংগঠনগুলো শুধু রাজনৈতিক দর্শন প্রচার করে না, বরং সরাসরি সহিংসতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র এখন এ ধরনের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। ‘কিংডম অব জার্মানি’-র নিষিদ্ধকরণ সে কৌশলেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

জার্মানি তাদের নাৎসি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী চরম ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ‘কিংডম অব জার্মানি’-কে নিষিদ্ধ করা একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ, তেমনি গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ রক্ষার প্রতীকী ঘোষণাও।

সবার দেশ/কেএম