(শেষ পর্ব)
রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠন ও সম্ভাবনা

একই সংস্থা কর্তৃক আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট দেখা দেয়।
রাজস্ব নীতি নির্ধারণ এবং প্রয়োগ উভয়ই একই ছাদের নিচে থাকার ফলে কর নীতির সঙ্গে আপস এবং ব্যাপক অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো কাঠামোগত জবাবদিহির আওতায় নেই এবং প্রায়ই কর খেলাপিদের কাছ থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে জনস্বার্থের দিক অগ্রাধিকার না দিয়ে আপস করেন। অনেক ক্ষেত্রে কর আদায়কারীরা কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে তাদের উল্টো সহায়তা করে থাকেন। কর আদায়কারীদের কর্মদক্ষতা বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া নেই এবং তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতি নিরূপণে কোনো পরিমাপযোগ্য কর্মদক্ষতা সূচকও নেই।
এনবিআর দীর্ঘদিন ধরেই স্বার্থের সংঘাত ও অদক্ষতার অভিযোগে সমালোচিত ছিলো। একসঙ্গে নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকায় সঠিক জবাবদিহি হয়নি। কর কর্মকর্তারা অনেক সময় করদাতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে সমঝোতা করতেন। কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে তারা অনাগ্রহী ছিলেন।
সে কারণেই ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে চিন্তা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। যা ইতিমধ্যেই চিন্তাশীল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভাবছে এটি সময়ের দাবি এবং খুব ভালো কাজ হয়েছে।
- ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তির ব্যবস্থাপনা করবে।
- আর ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ বিভাগ রাজস্ব নীতির প্রয়োগ, নিরীক্ষা এবং যথাযথ বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করবে।
কর নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষই কর আদায়কারী হবে না, এ পৃথকীকরণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হবে এবং যেকোনও ধরনের যোগসাজশের সম্ভাবনাকে দূর করবে, দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটবে। এ সংস্কারের ফলে প্রতিটি বিভাগ তার মূল লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ দিতে পারবে, বিশেষায়িত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। যদিও কর কর্মকর্তাদের একটি অংশ নতুন এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে নীতি প্রণয়ন বিভাগে সচিব নিয়োগ দানের বিরুদ্ধে তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারপরও নতুন ব্যবস্থাপনা এবং নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশ নতুনভাবে সম্বৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বলে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত একটি ধারণা শেয়ার করছি, কর আদায়ে নির্দিষ্ট আয়কর বিভাগকে যদি এমন করা যায় যে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর আদায় হবে। এখানে কোন মানুষের বিশেষ করে কর কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে হবে না, আমার মনে হয় এতে করে অনেক নতুন নতুন করদাতা কর প্রদানে আগ্রহী হয়ে দেশ গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকার লেনদেন হলে অসুধোপায় অবলম্বন করা অথবা নানা রকম করে ফাঁকি-বাজি দুটোই বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। তাই আসুন নিজের কর নিজে প্রদান করি, দেশ গঠনে সাহায্য করি। (সমাপ্ত)
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।