হামাস-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি ঘোষণা, উল্লাসে গাজাবাসী
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে। এ চুক্তি ঘোষণার পর গাজা উপত্যকাজুড়ে শুরু হয়েছে উল্লাস—রাস্তায় নেমে নাচ, শিস, হাততালি আর ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখর জনতা যেন মুক্তির আনন্দে ভাসছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ লিখেছেন,
ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। এর অর্থ হলো, খুব শিগগিরই সব জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে এবং ইসরায়েল নিজেদের সেনাদের নির্ধারিত একটি লাইনে সরিয়ে আনবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ চুক্তিকে ‘ইসরায়েলের জন্য এক মহান দিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চুক্তির অনুমোদনের জন্য তার সরকার বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ বৈঠক করবে।
অন্যদিকে হামাসের রাজনৈতিক দফতর থেকেও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ চুক্তি গাজার মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে এবং বেসামরিক জীবনের নিরাপত্তা ফেরাতে সহায়ক হবে।

গাজায় উল্লাস, ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের মুহূর্ত
চুক্তির খবর প্রকাশিত হতেই গাজা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় উদযাপন। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সাঈদ মোহাম্মদ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে—দেইর আল বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে নারী-পুরুষের ভিড়, সঙ্গীতের তালে তালে নাচ, হাততালি আর উচ্ছ্বাসে আকাশভেদী স্লোগান।
অন্য সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-হাদ্দাদ-এর ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার অন্য প্রান্তে তরুণদের ছোট দল রাস্তায় নেচে আনন্দ প্রকাশ করছে।
শুধু গাজায় নয়, ইসরায়েলেও অনেককে এ সংবাদে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। টেল আভিভের কিছু স্থানে মানুষ শান্তিচুক্তিকে ‘নতুন শুরু বলে বর্ণনা করেছেন।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,
এ দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত। এখন সকল পক্ষের উচিত শান্তিচুক্তির শর্তগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেন, এটি এক গভীর স্বস্তির মুহূর্ত। দুই পক্ষের সমঝোতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এক বিবৃতিতে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত, জিম্মি ও বেসামরিক প্রাণহানির পর এ চুক্তি শান্তির দিকে এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অগ্রগতি। আমরা সকল পক্ষকে আহ্বান জানাই—চুক্তির প্রতিটি শর্ত যেন সযত্নে রক্ষা করা হয়।
তিনি একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিশর, কাতার ও তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় শান্তিচুক্তির এ প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করবে। তবে সবাই সতর্ক করছেন—চুক্তির টিকে থাকা নির্ভর করবে পারস্পরিক আস্থা ও বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।
এদিকে গাজায় এখন একটাই স্লোগান—‘আর নয় যুদ্ধ, চাই শান্তি।’
সবার দেশ/কেএম




























