গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর আজ
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবশেষে শান্তির বার্তা। আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিসরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিতব্য এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে গাজা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে—যেখানে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি।
শনিবার মিসরের প্রেসিডেন্ট দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য—গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা।
সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। পাশাপাশি জার্মানি, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও যোগ দিচ্ছেন।
তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উপস্থিত থাকবেন কি না—তা এখনও অনিশ্চিত। অন্যদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হুসাম বাদরান জানিয়েছেন, সম্মেলনে হামাসের কোনও প্রতিনিধি সরাসরি থাকবে না; তারা কাতারি ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনায় যুক্ত থাকবেন।
এর আগে গত বুধবার শারম আল-শেখে পরোক্ষ আলোচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে প্রাথমিক ঐকমত্য হয়। তার ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপর গাজা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করে।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ গাজা শহরে ফিরে এসেছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরাইলি সেনাদের ‘হলুদ সীমারেখা’ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় আটক থাকা ২০ জন জীবিত জিম্মি এবং ইসরায়েলি কারাগারে থাকা দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে।
তবে যুদ্ধবিরতির পরও গাজার ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ভয়াবহ। ফিলিস্তিনিরা এখন বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের চেষ্টা করছে। বুলডোজার অপারেটর আলি আল-আত্তার বলেন, গাজার ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বর্ণনাতীত। চলাচলের রাস্তা চালু করতেই অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে—শুধু গাজা শহরেই ৪১ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, যা প্রায় ৮০ লাখ ঘনমিটার ধ্বংসস্তূপের সমান।
এদিকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন ৪০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দুই বছরের সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা এখন ৬৭ হাজার ৮০৬, আহতের সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ৬৬ জন।
আজকের শান্তি চুক্তিকে তাই অনেকে দেখছেন মধ্যপ্রাচ্যে এক ‘নতুন সূর্যোদয়’ হিসেবে—যেখানে রক্ত ও আগুনের বদলে আশা, পুনর্গঠন ও মানবিকতার বার্তা ছড়িয়ে পড়বে গাজা উপত্যকায়।
সবার দেশ/কেএম




























