Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০০:০৯, ১৮ মে ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব সতেরো)

নতুন জায়গয়ায় গেলে যা হয় আর কি, ঘুম ভেঙ্গে গেলো অনেক সকালে। পাশের বিছানায় তাকিয়ে দেখি আব্বা নেই। আব্বা যেখানেই যান খুব সকালে উঠেই নামাজ আদায় করে হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন। বাংলাদেশেও তাই দেখেছি।

আমি উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আকাশ দেখে মুগ্ধ হলাম। নীল আকাশ, ঝক ঝক করছে। ফিরে এলাম আবার নিজের খাটের দিকে। বসলাম। খেয়াল করলাম বসার সময় আমার ব্যাথাটা একটু বেশি লাগছে। দাঁড়িয়ে থাকলে আমার ডান পায়ে চিন চিন হালকা ব্যাথা থাকে, কিন্তু একটু বসলে ব্যাথাটা টের পাই। 

এ হোটেল থ্রি স্টার মানের। এক দিন থাকার জন্য খুবই ভালো। কিম্বা কেউ যদি প্রথমে চেন্নাই যায় তার জন্য এটা ঘুব ভালো। আমি হাসপাতালে আগেই জানিয়েছিলাম যেহেতু আমরা এ শহরে নতুন তাই আমাদের যেনো একটা গাড়ি পাঠায় তারা। 

এয়ারপোর্টে এসেই দেখি আব্বার নাম লিখে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ড্রাইভার। মাত্র ৪০ মিনিটে আমাদের নিয়ে এসেছিলো এ হোটেলে। মনে মনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইকে ধন্যবাদ দেই, তার পরামর্শে এ হোটেলে ওঠা। সুন্দর তবে বেশিদিন এখানে থেকে চিকিৎসা নেয়া যাবে না। এটার প্রতিদিনের খরচ অনেক বেশি না হলেও বেশি।

আব্বা ফিরে এলেন আমি ফ্রেশ হতে না হতেই। বাথরুম থেকে বেরিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আব্বাকে আমাদের কাজের পরিকল্পনা জানালাম। কী কী করতে হবে সব জেনে আব্বা বললেন, চল বেরিয়ে যাই, পথে নাস্তা সেরে নেবো। বাংলাদেশ থেকে আসার আগে জামান ভাই আমাকে কিছু ফর্ম দিয়েছিলেন, সেগুলো আমি ঢাকায় বসেই পূরণ করে নিয়েছিলাম। আমাদের কাজের কিছু সময় বাঁচবে এ আশায়। কিছুদিন আগেই আমার এক খালা এসেছিলেন তার স্বামীর চিকিৎসা করাতে তার কিছু পরামর্শ কাজে লাগাবো। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে বের হলাম। 

সকালের রোদ, চারিদিকে ঝলমল করছে। আমরা ঠিকঠাক হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে একটা খাবার হোটেলে গেলাম। সব পাওয়া যায়, রুটি, পরাটা সবজী, ডিম ভাজি। খাবারগুলো আমরা অনেক অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে আবার রাস্তা পার হয়ে এপোলো হাসপাতালের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। হাতে দুই দেশের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন। হাঁটছি আর ভাবছি আমাদের দেশে কত ডাক্তার, আমার নিজেরই কত বন্ধু ডাক্তার। আজ আমি কিনা পাশের দেশে এসেছি চিকিৎসা নিতে! 

এখানের অনেক কিছু ভালো লাগছে, কোন ট্যাক্সি ওয়ালারা বিরক্ত করছে না, সবাই যার যার মতো নিয়ম মেনেই কাজ করছে। ফুটপাতে দোকান, পাশে মোটরসাইকেল পার্কিং করা, কোন হৈ চৈ নেই। এখানকার মানুষের ভেতরে পেলাম স্থিরতা। 

চলে এলাম হাসপাতালে। যাবতীয় কাজ শেষ করে আব্বাকে টেস্ট করাতে বিভিন্ন খানে নিয়ে গেলাম একই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে। যেখানেই যাই অবাক হই, এত আন্তিরকতা বাংলাদেশে বিরল। সবাই এত নিয়ম মেনে চলে, সব কিছু একটা সিস্টেমে চলে। আব্বার অপারেশন এর তারিখ দিয়ে দিল আমরা ওয়ার্ডে থাকার জন্য রাজি হলাম। কিছু টাকা জমা দিয়ে আমাদের কাজ শেষ করলাম।

চল এবার কিছু খেয়ে নিই, আব্বা বললেন। একটা বাংলাদেশী হোটেল পেলাম খুব সুন্দর, রান্নাবান্না ভালো। খাবার পর দেখি বাঁশ খেয়ে গেলাম। এতো দাম। এর থেকে আমাদের চেন্নাইয়ের হোটেল অনেক ভালো। মজার ব্যাপার হলো আমরা কেউ মোবাইল ফোনের সিম কেনার জন্য তাগিদ অনুভব করিনি। চলে গেলাম আশে পাশেই সিম কেনার জন্য। দামাদামি ও ঘোরাঘুরির পরে একটা দোকানে পেলাম। সিম কেনা অনেক সময়ের ব্যাপার। এর ঠিক উল্টো দিকে একটা মুসলিম হোটেল পেলাম, মনে মনে ঠিক করলাম এখানে খেতে হবে রাতে। 

আমরা চেয়ারে বসে আছি, এক ভদ্রলোক প্রবেশ করলেন। আব্বার একটা ভালো গুণ আছে, যেচে তিনি মানুষের সাথে আলাপ করতে পছন্দ করেন, কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করেন। 

দোকানী বেশ কয়েকবার এটা দেন ওটা দেন, এটা ওটা কপি করে পরে একটা সিম বের করলো। মোবাইলটা চাইলো দিলাম। খেয়াল করলাম এরা টুকটাক বাংলা বলে ও বোঝে, বাকিটা হিন্দি দিয়ে চালিয়ে দেয়। 

ইতোমধ্যেই আব্বা একজন বাংলাদেশীর সাথে খাতির জমিয়ে ফেললেন, তিনি এক ক্যানসার এর রুগী নিয়ে এসেছেন। আমরা তার সাথে আলাপ করলাম, মোবাইল নম্বর চেয়ে নিলাম। এক অপরের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করে দোকান থেকে বের হলাম। লোকটাকে আমাদের পছন্দ হলো, তার নাম শামীম। 

আমাদের এখন একটা কম দামের হোটেল নিতে হবে। কারণ আব্বার অপারেশন হলে আমাদের সেখানেই থাকা লাগবে, খামাখা এ হোটেল ভাড়া কেন দেবো। তাই আরো কম দামের হোটেল এর সন্ধানে পিতা-পুত্র। শুধু এক দুইনের লাগেজ রাখার জন্য আর আমার মাঝে মাঝে এসে গোসল করার জন্য। রাস্তায় তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। (চলবে,,,) 

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার