Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৬ মে ২০২৫

আপডেট: ০০:৫৭, ২৬ মে ২০২৫

সচিবালয়, নগর ভবন, এনবিআরসহ অচল রাজধানী

প্রশাসনে ত্রিমুখী আন্দোলনের অভিঘাত, জনতার মঞ্চের পদধ্বনি

প্রশাসনে  ত্রিমুখী আন্দোলনের অভিঘাত, জনতার মঞ্চের পদধ্বনি
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর বিরোধিতায় গতকাল দিনভর অচল ছিলো প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। ‘কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে কর্মচারীরা এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সময়ে প্রায় দুই সপ্তাহের কর্মবিরতির জেরে অচল হয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এদিকে মেয়রপদে বিএনপির ইশরাক হোসেনের দায়িত্বপ্রাপ্তি নিয়ে টানাপড়েনে প্রায় দশদিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও। দেশের প্রশাসনিক, রাজস্ব ও নগর ব্যবস্থাপনায় একযোগে এ অচলাবস্থা নজিরবিহীন।

সচিবালয়ে অচলাবস্থা: কালো আইন বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’–এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। সকাল থেকে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী বাদামতলায় জড়ো হয়ে মিছিল করেন সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের চারপাশে।

সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীরা অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, নতুন অধ্যাদেশে এমন কিছু ধারা সংযোজন করা হয়েছে যা কর্মচারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই চাকরিচ্যুতির পথ সুগম করেছে। এর মাধ্যমে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

সচিবালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে কর্মচারীরা অবস্থান নিলে প্রায় ২০ মিনিট ফটক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবিনামা পেশ করেন নেতারা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য: ‘সময় মতো যা দরকার, তা-ই করা হয়’

অধ্যাদেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যে রকম যেটা যে সময়ে দরকার পড়ে, সে সময়ে সেটা করা হয়। তবে অধ্যাদেশের মূল ব্যাখ্যার দায়িত্ব নিজের ওপর নেননি তিনি। বরং উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের আইন সংশোধন করে আগের অবস্থানে ফেরা হয়েছে মাত্র।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ২০১৮ সালে যেসব বিধান সংশোধিত হয়েছিল তা আবার ফিরিয়ে এনে শাস্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সরকার। এটি নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক দমননীতির অংশ বলেও অভিযোগ উঠছে।

এনবিআর: কর্মবিরতি স্থগিত, অসহযোগ অব্যাহত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চলমান কর্মবিরতির অবসান হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিশ্রুতি ঘোষণার পর। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআর বিভাজন অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা আসায় ‘কর্মবিরতি প্রত্যাহার’ করলেও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, অসহযোগ আন্দোলন চলবে।

চার দাবিতে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিষদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না বরং এটি একটি স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী বিভাগে রূপান্তরিত হবে। রাজস্ব নীতি নির্ধারণের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান গঠনের কথাও জানানো হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী সরকার কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অতিরিক্ত সময় কাজ করে অনিষ্পন্ন কাজ শেষ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে সরকারের জারি করা ‘রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর বিরুদ্ধে ১৩ মে থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে প্রশাসন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং সংবাদ সম্মেলনে বাধা দেয়া হয়—যা আন্দোলনকারীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।

নগর ভবনে বিক্ষোভ: ইশরাকের মেয়রত্ব নিশ্চিতের দাবিতে অচল ডিএসসিসি

দশ দিন ধরে কার্যত অচল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে প্রতিদিনের মতো গতকালও অবস্থান নিয়েছিলেন তার সমর্থক ও করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

আদালতের রায়ে তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ ঘোষণা করা হলেও এখনও শপথ পড়ানো হয়নি তাকে। এ পরিস্থিতিতে তার সমর্থকদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা—‘ইশরাক শপথ না নেয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।’

ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভে অচল ডিএসসিসির নগর ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৪ মে থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি প্রতিদিনই প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি করছে। যদিও একটি রিটের মাধ্যমে ইশরাকের শপথে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিলো, হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

তিনটি প্রধান প্রশাসনিক অঙ্গ—সচিবালয়, এনবিআর ও নগর ভবন—যেখানে একযোগে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তা প্রশাসনিক অস্থিরতার গভীর সংকেত বহন করে। একটি কালাকানুন, একটি প্রশাসনিক পুনর্গঠন, এবং একটি আদালতের রায় বাস্তবায়ন—এ তিন আলাদা ইস্যু একসঙ্গে যখন আন্দোলনের জন্ম দেয়, তখন তা নিছক কর্মচারী অসন্তোষ থাকে না। এটি হয়ে ওঠে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে বিশ্বাস সংকটের প্রতীক।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

পাঁচ অস্ত্রসহ গ্রেফতার লিটন গাজী সম্পর্কে সব জানালো পুলিশ সুপার
আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যবস্থাপক গ্রেফতার
লালমনিরহাটে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের যাবজ্জীবন
ভোলাহাটে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দালাল চক্রের খপ্পরে
বাংলাদেশ সীমান্তে পঁচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ
সুদের টাকার জন্য নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার-১
ইমরান খান বেঁচে আছেন, দেশ ছাড়তে চাপ: পিটিআই
হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের প্লট দুর্নীতি মামলার রায় আজ
শুরু হলো বিজয়ের মাস
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত
খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে হাসপাতালে জামায়াত সেক্রেটারি
স্কুল ভর্তির লটারি ১১ ডিসেম্বর
বিডিআরকে দুর্বল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড
ছয় উপসচিবের দফতর পরিবর্তন