মেঘনায় ছোঁয়াচে স্ক্যাবিসের উদ্বেগজনক বিস্তার

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় সম্প্রতি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ‘স্ক্যাবিস’ নামের এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘরে ঘরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, তার ছেলে সাফওয়ানের প্রথম স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হন। ‘প্রথমে হাত-পায়ে লালচে র্যাশ উঠে, তারপর ভয়ানক চুলকানি শুরু হয়। ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছুটা কমে, আবার শুরু হয়’, তবে ডাক্তারের চিকিৎসা ও সঠিক পরামর্শে এখন অনেকটাই ভালো আছে বলে জানান তিনি।
মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের ডা. রুবেল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি স্ক্যাবিস রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চর্মরোগে আসা রোগীর প্রায় ৭৫ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এটি দ্রুত ছড়ায়, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে ও বিছানার চাদর থেকে সংক্রমণ হয়। জনবহুল পরিবেশ যেমন- স্কুল, মাদ্রাসা, হোস্টেল ও যৌথ পরিবারে রোগের বিস্তার বেশি। এজন্য আক্রান্ত পরিবারের সবার একসঙ্গে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ, নিয়ম মেনে চলা এবং সচেতনতা খুবই জরুরি।”
তিনি বলেন, স্ক্যাবিস মূলত এক ধরনের পরজীবী Sarcoptes scabiei এর মাধ্যমে ছড়ায়, যা মানুষের ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে। এর ফলে তীব্র চুলকানি ও ঘামাচির মতো দানা হয়, যা সাধারণত হাত, আঙুলের ফাঁক, পেট, ঘাড়, কোমরসহ দেহের বিভিন্ন ভাঁজে দেখা দেয়। তাছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে ও চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। বিছানা, বালিশ ও মশারি ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখা উচিত এবং তার ব্যবহৃত জিনিস কেউ যেন ব্যবহার না করে। নিয়মিত গোসল, পরিষ্কার জামাকাপড় পরিধান, নখ ছোট রাখা এবং শিশুদের ব্যক্তিগত পরিসর বজায় রাখাও স্ক্যাবিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, রোগী লুকিয়ে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া এবং আশপাশের মানুষকে সচেতন করার বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা রহমান বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে শত শত রোগী স্ক্যাবিস নিয়ে আসছেন। আগে যেসব ওষুধ দ্রুত আরাম দিতো, এখন অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো আগের মতো কার্যকর নয়। তবে নিয়ম মেনে ওষুধ ব্যবহার করলে রোগ ভালো হয়। গরম, ঘাম ও গোসলের পর ভেজা কাপড় দীর্ঘক্ষণ শরীরে থাকলে রোগ ছড়াতে সুবিধা হয়। এবারের সংক্রমণে কিছু যৌনবাহিত উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। তাই একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের সবাইকে সতর্ক ও চিকিৎসা নেয়া জরুরি। তাছাড়া মেঘনায় এখন পর্যন্ত স্ক্যাবিসে মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে উপেক্ষা করলে রোগের জটিলতা বাড়তে পারে। তাই শুধু ওষুধ নয়, পরিচ্ছন্নতা ও পারিবারিক সচেতনতা স্ক্যাবিস প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার বলে জানান তিনি।
সবার দেশ/কেএম