রুশ রাসায়নিক কারখানায় ইউক্রেনের হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে
ব্রিটেনের তৈরি স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী একে ‘সফল হামলা’ বলে ঘোষণা করেছে, যদিও রাশিয়া এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের সেনা সদর দফতর জানায়, এ হামলা রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এটি ছিলো বৃহৎ পরিসরের যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান অভিযানের অংশ, যার মূল লক্ষ্য ছিলো রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক কেমিক্যাল প্লান্ট—যা রুশ সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে পরিচিত।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে বলা হয়েছে, ওই কারখানায় গানপাউডার, বিস্ফোরক এবং রকেট জ্বালানির উপকরণ তৈরি করা হয়—যা রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে হামলার জন্য ব্যবহার করে আসছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ হামলা রাশিয়ার সামরিক উৎপাদন শৃঙ্খলে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্কতা উপেক্ষা করেই কিয়েভ এবার দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে এগিয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে।
রাশিয়া বরাবরই পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছে—
ইউক্রেনকে যেন এমন অস্ত্র সরবরাহ না করা হয় যা দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত হানা সম্ভব। কিন্তু ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র চালাতে যেসব স্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোতে হামলা চালানো আত্মরক্ষারই অংশ।
একইদিন লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথভাবে ঘোষণা দেন—
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক খাতে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হবে যতক্ষণ না প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘গঠনমূলক শান্তি আলোচনায় রাজি হন’।
এ যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নরওয়ের নেতারা বলেন,
যুদ্ধবিরতির আগে, চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও ইউক্রেনকে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কির বৈঠকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হলেও ট্রাম্প তাতে অনীহা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পরিকল্পনাও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
এদিকে বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাশিয়া আবারও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলা চালায়। স্থানীয় মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, শহরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়ভাবে হামলা প্রতিহত করছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে দুই দেশের সংঘাত এখনো অব্যাহত। বর্তমানে মস্কো ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও অন্তর্ভুক্ত।
সাম্প্রতিক এ স্টর্ম শ্যাডো হামলাকে অনেকেই ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের নতুন ধাপ হিসেবে দেখছেন—যা রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা ও মনোবলে এক বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সবার দেশ/কেএম




























