বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান
‘বাঙালির রাজনীতিই আওয়ামী লীগের রাজনীতি’

আওয়ামী লীগকে ‘বাঙালির রাজনীতির স্বাভাবিক ধারার প্রতিফলন’ হিসেবে অভিহিত করলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও একসময়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, এ দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বাঙালি। বাঙালির একটা নিজস্ব রাজনৈতিক অভিব্যক্তি থাকবে, আর সেটিই মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এটা মাঠি ফুঁড়ে ওঠা রাজনীতি, যা মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়েছে।
রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে তার স্পষ্ট মত
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ফজলুর রহমান বলেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বলে কিছু হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে সে রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। যে নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছে, তাদেরকে পুনর্বাসনের কথা ভাবাটাই রাজনৈতিক অজ্ঞতা।
তার মতে, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যারা ব্যাংক লুট করেছে, যারা আওয়ামী লীগকে হাইব্রিড নেতৃত্বে ধ্বংস করেছে—তাদের জায়গা রাজনীতিতে নেই। রিফাইন্ড নয়, বরং এ ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতৃত্বকে চিরতরে বিদায় দেয়া দরকার।
আওয়ামী লীগ নিয়ে দ্বিমুখী মূল্যায়ন
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের উপদেষ্টা হয়েও আওয়ামী লীগকে একটি ‘স্বতঃসিদ্ধ রাজনৈতিক সত্তা’ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন ফজলুর রহমান। তার ভাষায়, আওয়ামী লীগ কোনো ব্যক্তির নাম না। শেখ হাসিনা না থাকলেও আওয়ামী লীগ থাকবে। এটা বাঙালি জাতিসত্তার রাজনৈতিক বিকাশের ফল।
তবে তিনি একইসঙ্গে স্পষ্ট করে দিয়েছেন—বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতৃত্বকে তিনি দায়ী করছেন দলটির 'ধ্বংসযাত্রা'র জন্য।
তিনি বলেন, চোর, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা—এ শ্রেণির মানুষই আওয়ামী লীগের ক্ষতি করেছে। নতুন কোনও রিফাইন্ড সংস্করণ এনে তাদের পুনর্বাসন করা হলে সেটা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি:
ফজলুর রহমানের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন তুলেছে। একদিকে তিনি একটি দলের নীতিকে ‘জাতিগত ধারার স্বাভাবিকতা’ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে দলটির বর্তমান রূপকে করছেন প্রচণ্ড সমালোচনা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একধরনের আদর্শিক জটিলতা, যেখানে ব্যক্তি বনাম প্রতিষ্ঠান দ্বন্দ্ব প্রকট।
ফজলুর রহমানের মন্তব্য মূলধারার রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ কি আদৌ কোনো বাস্তব কনসেপ্ট, নাকি এটি ক্ষমতা হস্তান্তরের এক নতুন ছক? আর বিএনপির উপদেষ্টা হয়েও সাবেক ছাত্রলীগ নেতার এমন মন্তব্য—তা রাজনৈতিক কৌশল, না অভ্যন্তরীণ রূঢ় সততা—এ প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
সবার দেশ/কেএম