বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যেতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা
কেটে গেছে কালো মেঘ, শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ
সোনালি সকালের দিকে বাংলাদেশ: শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ, প্রধান উপদেষ্টা দেখা করতে পারেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। আগামী মাসেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বৈঠক।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘনীভূত সঙ্কট এখন ধীরে ধীরে প্রশমিত হচ্ছে। সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ সংক্রান্ত গুজবের নিরসন, এবং নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের নতুন সক্রিয়তা—সব মিলিয়ে রাজনীতিতে এখন এক নতুন সম্ভাবনার আভাস তৈরি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ‘গুজব’, থাকছেন ইউনূস
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিলো—ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন কি না। গুজবের সূত্রপাত ঘটে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিএনপি ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে।
তবে ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরিষ্কার জানান, পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই নেই। তিনি লিখেন—স্যার ক্ষমতার জন্য এখানে আসেননি। কিন্তু বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য তার দরকার আছে। এ বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ড. ইউনূস নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা আগামী সপ্তাহগুলোতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো—জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি এবং নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত করা।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপের তারিখ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারিত হতে পারে। দেশের প্রধান দল বিএনপিও এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও সম্প্রতি বলেছেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।
এ বক্তব্যকে ‘গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন’ বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও এখন বলছেন, নির্বাচন ছাড়া এ অস্থিরতা থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদে সৌজন্য সাক্ষাত?
আসন্ন ঈদুল আজহার সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেন—এমন ইঙ্গিত মিলেছে সরকারের একাধিক সূত্রে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা নিছক রাজনৈতিক সৌজন্য নয়—বরং চলমান অচলাবস্থা নিরসনে একটি কৌশলগত ‘সফট কূটনীতি’।
প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে এ সাক্ষাত রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো বটেই, পাশাপাশি সংকট উত্তরণে একটি মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
ইশরাকের শপথ বিলম্ব এবং ছাত্রনেতা সৌম্যর হত্যাকে ঘিরে উত্তেজনা
সম্প্রতি ঢাকার দক্ষিণে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে সরকারের ভেতরে মতবিরোধ ও অদৃশ্য বাধার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামে। এর মধ্যে ঢাবি ছাত্রদলের নেতা সৌম্য হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও বিস্ফোরক করে তোলে।
এ প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির একটি পক্ষ রাজপথে নামে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সরকারঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। এ পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতিকে নতুন করে উত্তপ্ত করে তোলে।
এ সুযোগে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করার চেষ্টা করে।
ইউনূসকে ঘিরে বিভক্ত উপদেষ্টা পরিষদ
সূত্র বলছে, ড. ইউনূস প্রথমদিকে নির্বাচন ঘিরে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। তার উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য—বিশেষত যারা অতীতে জাসদ ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—তারা অন্তত ৩ বছরের জন্য সরকার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে সেনাপ্রধানের বক্তব্য এবং ব্যবসায়ী মহলের চাপের পর তিনি আবার নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অটল হয়েছেন।
রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের অবস্থান
- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। দ্রুত নির্বাচনই একমাত্র পথ।
- সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাই না। বরং আমরা চাই তিনি দ্রুত নির্বাচনের স্পেসিফিক রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
- ফরহাদ মজহার তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ড. ইউনূসের উচিত জনগণের ঐতিহাসিক অভিপ্রায়কে সম্মান করা, কোনো গোষ্ঠীর চাপে সিদ্ধান্ত না নেয়া।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার দৃষ্টি এখন প্রধান উপদেষ্টার দিকে। নির্বাচন হবে কিনা, হলে কবে হবে, খালেদা জিয়া কি রাজনৈতিক আলোচনায় সরাসরি যুক্ত হবেন, সেনাবাহিনীর অবস্থান কী থাকবে—এসব প্রশ্নের উত্তর আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরিষ্কার হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ মুহূর্তে নির্বাচনকে ঘিরে একটা সর্বদলীয় ঐক্য তৈরি হচ্ছে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারও গুরুত্ব দিচ্ছে।
সবার দেশ/কেএম