হত্যাচেষ্টায় ছিলো মাসের পর মাসের ছক
রিসোর্টে নারীসঙ্গ কাটিয়ে ঢাকা এসে হাদিকে গুলি করা হয়
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা ছিলো দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত হামলা—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের ধারণা, কয়েক মাস ধরে ছক কষেই এ হত্যাচেষ্টা চালানো হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলি চালানোর আগের রাতে হামলাকারীরা সাভারের আশুলিয়ার একটি রিসোর্টে অবস্থান নেয়। সেখানে তাদের জন্য মোজমাস্তির আয়োজন করে হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা। ওই রাতে শুটার ফয়সাল করিম ও আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন দুই নারী সঙ্গীও।
গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাতটি তারা রিসোর্টেই কাটান। পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল প্রায় ৮টার দিকে তারা রিসোর্ট ত্যাগ করে ঢাকায় আসেন। এরপর জুমার নামাজের পর হাদিকে অনুসরণ করে গুলি চালিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা। গোয়েন্দা সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটির তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের মামলার বাদী হন। মামলায় ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পল্টন থানার মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। ডিবি সূত্র জানায়, দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে গতকাল আদালত শুটার ফয়সাল করিমের স্ত্রী সামিয়া, তার শ্যালক শিপু ও রিসোর্টে অবস্থানকারী বান্ধবী মারিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আবদুল হান্নানকে গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এ ছাড়া হামলার পর শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। শেরপুরের বারোমারি সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ পারাপারে সহায়তার অভিযোগে ফিলিপের মামাশ্বশুর বেঞ্জামিন চিড়ান (৪৫) এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল (২৮) কে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি জানায়, তাদের আটকের আগেই ফিলিপের স্ত্রী ডেলটা চিড়ান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং আরেক সহযোগী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে পাচার চক্রের সদস্য সিবিয়ন দিও ও সঞ্জয় চিসিমকেও পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
আলমগীরের বন্ধু হাবিবুর রহমান ও মিলনকে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানায়, বিজিবি যাদের আটক করেছে তাদের এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে তাদেরও মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেয়া হতে পারে।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শরিফ ওসমান হাদিকে গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি সিঙ্গাপুরের সেলেতার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে গালফস্ট্রিম জি-১০০ সিরিজের একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে বহন করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টার উড্ডয়নের পর অ্যাম্বুল্যান্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছে।
হাদির সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গেছেন তার ভাই ওমর বিন হাদি এবং বন্ধু আমিনুল হাসান ফয়সাল।
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়ার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, যাত্রার আগে বাংলাদেশ সরকার ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে টেলিকনফারেন্সে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুধু হাদির জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ রহম করলে হয়তো তিনি একটি সহনীয় মাত্রার সুস্থতা নিয়ে ফিরে আসবেন।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
র্যাবের পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায়, কবির হাদির আশপাশের এলাকাতেই নিয়মিত অবস্থান করতেন। তবে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কবিরের নির্দিষ্ট ভূমিকা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানায়নি র্যাব।
সবার দেশ/কেএম




























