বিদ্রোহী কবির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত জুলাইবিপ্লবী
এক হাদির জানাজায় লাখো হাদির উপস্থিতি
একটি মাত্র জানাজা রূপ নিল লাখো মানুষের মহাসমাবেশে। জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অগ্রসেনানি ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরীফ ওসমান হাদির বিদায় বেলায় আজ রাজধানী ঢাকা যেন কান্নার নগরীতে পরিণত হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্মরণকালের অন্যতম বৃহত্তম জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
শনিবার দুপুর দুইটায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন শহীদ হাদির বড় ভাই, বরিশাল বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও গুঠিয়া জামে মসজিদের খতিব ডা. আবু বকর সিদ্দিক। জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে হাদির দেশপ্রেম ও ত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এর আগে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও সংসদ ভবন এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ময়নাতদন্ত শেষে কফিনবাহী গাড়িটি যখন সংসদ ভবনের দিকে রওনা হয়, তখন হাজার হাজার সহযোদ্ধা ও সমর্থক মিছিল নিয়ে কফিন অনুসরণ করেন। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লাশ নিয়ে আসা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখানে বিদ্রোহী কবির কবরের পাশে যখন হাদিকে সমাহিত করা হচ্ছিলো, তখন উপস্থিত লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবার কণ্ঠে ছিলো খুনিদের বিচার এবং হাদির আদর্শ বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার।

শহীদ ওসমান হাদির এ করুণ পরিণতির শুরু গত ১২ ডিসেম্বর। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে নির্বাচনি প্রচার চালানোর সময় নিষিদ্ধ সংগঠন জঙ্গি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে এসে চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথায় খুব কাছ থেকে গুলি করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।
হাদির বড় ভাই ডা. আবু বকর সিদ্দিক জানাজার আগে দেয়া বক্তব্যে তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, হাদি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য জীবন দিয়েছে, তার এ আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। ঝালকাঠির এক নিভৃত পল্লী থেকে উঠে আসা এ তরুণ বিপ্লবী আজ দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে বীর হিসেবে স্থান করে নিলেন।
সবার দেশ/কেএম




























