হাদি তোমাকে বিদায় দিতে আসিনি, ওয়াদা করতে এসেছি: প্রধান উপদেষ্টা
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অগ্রসেনানি শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় যোগ দিয়ে এক আবেগঘন বক্তব্য রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তিনি বলেন,
প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি; আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি। তুমি যা বলে গেছো, তা যেন আমরা পূরণ করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে হাদিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আজ সারা বাংলাদেশ কোটি কোটি মানুষ হাদির জন্য শোক পালন করছে। শুধু দেশে নয়, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরাও আজ হাদির কথা জানতে চায়। হাদি আমাদের বুকের ভেতরে আছেন এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন। এটি কেউ কোনওদিন মুছে ফেলতে পারবে না।
ড. ইউনূস হাদির রাজনৈতিক দর্শন ও সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, হাদি আমাদের এমন এক মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন যা কোনোদিন ভোলার নয়। তার সে মন্ত্র ছিলো ‘বীর উন্নত মম শির’। এ মন্ত্র প্রতিটি বাংলাদেশি সন্তানের জন্মলগ্ন থেকে আমৃত্যু অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো এবং কারো কাছে মাথা নত করবো না—এটাই হোক হাদির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার।
হাদির নির্বাচনী প্রচারণার কৌশলের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন এবং মানুষের কাছে যাওয়ার এক অনন্য বিনীত ও মার্জিত প্রক্রিয়া আমাদের শিখিয়ে গেছেন। কীভাবে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে হয়, তা তিনি দেখিয়েছেন। আমরা সে শিক্ষা গ্রহণ করলাম এবং আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।
জানাজার আগে সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ব্যানার, ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে জড়ো হতে থাকেন। সমবেত জনতা ‘আমরা সবাই হাদি হব’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, এবং ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগানে রাজপথ মুখর করে তোলেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুপুর ২টা ৩৩ মিনিটে জানাজা সম্পন্ন হয়।
বক্তব্যের শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রিয় হাদি, তোমাকে আজ আল্লাহর হাতে আমানত রেখে গেলাম। তোমার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবো। তুমি যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে জাগ্রত থাকবে।’
সবার দেশ/কেএম




























