গণতন্ত্রের যাত্রা এখনও পদে পদে বাধাগ্রস্ত: খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন, সে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে—এটাই হোক জিয়ার শাহাদত বার্ষিকীর প্রধান অঙ্গীকার।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের স্মরণে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

বেগম জিয়া বলেন, মে মাসের এ দিনটি আমাদের পরিবারের জন্য যেমন শোকাবহ, তেমনি দেশের জন্যও বেদনাবিধুর। দেশ তখন হয়ে পড়েছিলো অভিভাবকহীন। চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যিনি জাতির আশা হয়ে উঠেছিলেন, সে জিয়া একই চট্টগ্রামে শহীদ হলেন।

তিনি বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের মুক্তির রূপকার। তার আদর্শ বাস্তবায়নেই দেশের সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে।

তারেক রহমান: ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ দিন

সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয় এবং তারা ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। এতে রাষ্ট্রে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত। আমরা দাবি করছি—ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করুন। প্রয়োজনে তার আগেও নির্বাচন হতে পারে, কারণ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সংস্কারে একমত।

তারেক আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও তাদের উপদেষ্টারা জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। জনগণের সমস্যা জানার সুযোগ নেই বললেই চলে। শুধু ফাইলনির্ভর প্রশাসন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। জনগণের ভোটেই সরকার গঠিত হতে হবে, যাতে রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা পায়।

তিনি শহীদ জিয়ার আদর্শ স্মরণ করে বলেন, শহীদ জিয়া মানেই আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন কর্মের মানুষ, গর্জনের নয়। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ইতিহাসে তার অবস্থান চিরভাস্বর।

ফখরুল: জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে

সভায় ব্যাংকক থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার বহু চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, এ মহান ব্যক্তিত্ব মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন—তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।

নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করে তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।

ড. মঈন খান বলেন, এ সংগ্রাম অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, সরকার সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করছে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সরকার নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলছে না—তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

সবার দেশ/কেএম