Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ৬ মে ২০২৫

১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন জুবাইদাও

ফিরোজার পথে খালেদা জিয়া

ফিরোজার পথে খালেদা জিয়া

চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর দেশের মাটিতে ফিরে আসলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা ১১টার পর তার গাড়িবহর রওনা হয় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র উদ্দেশে। সঙ্গে রয়েছেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন জুবাইদা—যার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশার ঢেউ।

সড়কে সড়কে জনস্রোত, নেত্রীর অপেক্ষায় লাখো জনতা

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর হাতে ছিল ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, জাতীয় ও দলীয় পতাকা। কোথাও গলা ফাটিয়ে স্লোগান, কোথাও চোখেমুখে একরাশ প্রশান্তি—‘মা’র ফেরাকে উদযাপন করলেন তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আগে থেকেই সতর্কতা জারি করা হয়েছিলো যেন সড়কে অবস্থান না নিয়ে নেতাকর্মীরা ফুটপাতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়ান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নেয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা। অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ একাধিক ইউনিট ছিল সতর্ক অবস্থানে।

লন্ডন থেকে আবেগঘন বিদায়, দেশে ফিরে ঘরে ফেরা

সোমবার (৫ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবার। বিদায় জানানোর মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বড় ছেলে ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাকে বিদায় দিতে গিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দলের একাধিক নেতা-কর্মী ও লন্ডন প্রবাসী স্বজনরাও ছিলেন সেখানে।

জুবাইদার প্রত্যাবর্তন: ১৭ বছরের প্রবাসজীবনের অবসান

লন্ডন থেকে মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত জুবাইদা রহমান ২০০৭ সালের পর রাজনৈতিক হয়রানির কারণে আর দেশে ফিরতে পারেননি।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, গ্রেফতার আতঙ্ক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি দীর্ঘ প্রবাসে ছিলেন। তার এ ফিরে আসা শুধু পারিবারিক নয়, রাজনৈতিক প্রতীকী শক্তিরও বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, দেশে ফিরে জুবাইদা রহমান থাকবেন তার পৈতৃক নিবাস ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবনে’। তার জন্য বাড়ির আঙিনা নতুন করে সাজানো হয়েছে—পরিচ্ছন্নতা, সংস্কার ও নিরাপত্তার দিকেও নজর দেয়া হয়েছে।

ফিরোজা প্রস্তুত, দৃষ্টি এখন চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে

খালেদা জিয়ার আবাসস্থল ‘ফিরোজা’ নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই চলবে, তবে বিদেশে ফের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি দেন খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ছিলেন তারেক রহমানের বাসায়। সেখান থেকেই প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের মতো বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চলে তার চিকিৎসা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সে চিকিৎসার অনুমতি পেতে লড়তে হয়েছে তাকে—সেটি ছিল এক দীর্ঘ, ক্লান্তিকর এবং নিষ্ঠুর লড়াই।

ফেরা মানেই শেষ নয়, শুরু এক নতুন অধ্যায়ের

বেগম খালেদা জিয়ার এ প্রত্যাবর্তন কেবল একজন নেত্রীর ফিরে আসা নয়—এটি যেন এক অন্ধকার সময়ের চক্রপথ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও। তার সঙ্গে ফিরেছেন পরিবার, জেগে উঠেছে দল, জাগ্রত হয়েছে পথঘাট। এখন দেখার বিষয়, সামনে কী লিখে দেয় রাজনীতি।

সবার দেশ/কেএম