Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৫ মে ২০২৫

আপডেট: ০০:১৭, ৫ মে ২০২৫

কারখানায় আগুনে ছাই ৪ হাজার বর্গমিটার, হতাহতের তথ্য গোপন?

বিস্ফোরণে আবারও কেঁপে উঠলো ইরান

বিস্ফোরণে আবারও কেঁপে উঠলো ইরান
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম পবিত্র শহর মাশহাদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে কেঁপে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। রোববারের এ ঘটনায় একাধিক অজ্ঞাত সংকেত সামনে এলেও, ঘটনার প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। 

মেহের নিউজসহ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মিডিয়ায় ঘটনাটিকে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা হলেও, স্থানীয় পর্যায়ে ঘনীভূত হচ্ছে নানা প্রশ্ন।

বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়ে আগুন, পুড়ে ছাই কারখানা ও গুদাম

মেহের নিউজ এজেন্সির বরাতে জানা যায়, বিস্ফোরণটি ঘটেছে মাশহাদের একটি মোটরসাইকেল কারখানায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে সংলগ্ন ৪ হাজার বর্গমিটারের একটি গুদামে, যেখানে বিপুল পরিমাণ টায়ার ও কার্ডবোর্ড মজুদ ছিলো। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস প্রধান জানিয়েছেন, পুরো গুদামটি আগুনে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।

তবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত কোথা থেকে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না কি কোনও নিরাপত্তাগত গাফিলতির ফল, সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তদন্তের দাবি উঠছে।

হতাহতের সংখ্যা নিয়ে রহস্য, সরকারি নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ

রিপোর্টে হতাহতের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। অথচ বিস্ফোরণের পর প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিলো যে আশপাশের ভবনগুলোও কেঁপে ওঠে। স্থানীয়দের অনেকে দাবি করেছেন, বেশ কিছু কর্মী কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তাদের ভাগ্য নিয়ে এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

এ তথ্য গোপনীয়তা ইরানের সরকারি তথ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্কৃতিকে পুনরায় সামনে এনেছে—বিশেষত তখন, যখন জাতির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শিল্প স্থাপনাগুলোর ঝুঁকি বাড়ছে।

মাত্র ৮ দিন আগে বন্দরে বিস্ফোরণ, তাহলে ধারাবাহিকতা?

প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল দেশটির সবচেয়ে বড় বন্দর—বন্দর আব্বাসের শহিদ রাজি টার্মিনালে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হয়। সেখানেও সরকার প্রথমে হতাহতের সংখ্যা অস্বীকার করেছিলো। পরে জানানো হয়, রাসায়নিক পণ্যের কারণে আগুন লেগেছে; নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ঠিক আটদিন পর ফের বিস্ফোরণ, এবার দেশটির ধর্মীয় রাজধানীতে। এতে প্রশ্ন জাগছে—দেশব্যাপী কি কোনও শিল্প-নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে? নাকি কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত ‘সাবোটাজ’ চলছে, যা সরকার অস্বীকার করে যাচ্ছে?

দায় এড়াতে ‘নাশকতা নয়’—কৌশলগত ব্যাখ্যা?

ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি আগের বিস্ফোরণকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়িয়েছেন। মাশহাদের ঘটনায় এখনো তার দফতর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে—এ ঘটনাতেও তারা একই ব্যাখ্যার পুনরাবৃত্তি করবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় শহর ও কৌশলগত বন্দর—এ দুটি আলাদা অঞ্চলে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিস্ফোরণ ঘটায় ইঙ্গিত মিলছে বৃহত্তর ব্যর্থতার—হোক তা শিল্প নিরাপত্তায়, রাষ্ট্রীয় অবহেলায় কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে জড়িত গোপন সংঘর্ষে।

প্রশ্ন উঠছে, উত্তর কোথায়?

ইরান সরকারের প্রকাশিত তথ্যের বাইরেও বাস্তবতা হলো—দেশটির অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো বর্তমানে বড় রকমের চাপের মুখে। মাশহাদ বিস্ফোরণ সে সংকটের আরেকটি উদাহরণ, যেখানে মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও তথ্য-স্বচ্ছতা তিনটিই ঝুঁকির মধ্যে। যদি সত্যিই এটি দুর্ঘটনা হয়, তবে প্রশ্ন—কেনো এতো ঘনঘন? আর যদি না হয়, তবে কে বা কারা চক্রান্ত করছে? সরকার কি সেগুলোর মোকাবিলায় প্রস্তুত?

সবার দেশ/কেএম