তীব্র খাদ্য সংকটে আরও ১০ জনের মৃত্যু
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ১০০
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলার পাশাপাশি ভয়াবহ খাদ্য সংকটে মৃত্যু বাড়ছে হু হু করে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সময়ে অনাহারে মৃত্যু হয়েছে আরও ১০ জনের।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১১ জন। এর বেশিরভাগই ঘটেছে গত কয়েক সপ্তাহে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের (২৪ জুলাই) হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ছিলেন যারা মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তারা নিহত হন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে নিহতদের মধ্যে ২১ জন শিশু ছিল পাঁচ বছরের নিচে। সংস্থাটি জানিয়েছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত টানা প্রায় ৮০ দিন গাজায় কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ করেছে, তবে তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম।
এক যৌথ বিবৃতিতে মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, গাজায় এখন ‘গণ-অনাহারের’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাদের দাবি, গাজার সীমান্তের বাইরেই খাদ্য, পানি ও ওষুধ মজুদ রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে তা গাজায় প্রবেশ করানো যাচ্ছে না।
দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ক্ষুধা এখন বোমার মতোই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী নয়, যা পাচ্ছে তাই খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। তিনি বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ, মানুষ ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মে মাসে সীমিত সহায়তা প্রবেশ শুরু হলেও বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এ সহায়তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার অভিযোগ, ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও প্রস্থানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। মে মাস থেকে শত শত ফিলিস্তিনি, যারা সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি বিভাগের পরিচালক রস স্মিথ বলেন, গাজায় কার্যক্রম চালাতে হলে অন্তত কিছু ন্যূনতম নিরাপত্তা দরকার, বিশেষ করে বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে যেন কোনো সশস্ত্র বাহিনী না থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিলিস্তিন অঞ্চলের প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন জানান, সহায়তা নিতে আসা মানুষদের ওপর হামলার কারণে গাজার হাসপাতালগুলো কার্যত ট্রমা ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসক, শিক্ষক এমনকি সাংবাদিকরাও ভয়াবহ খাদ্য সংকটে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, আমেরিকান নাগরিক নুর শরাফ জানান, মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরাও খাদ্যের সংকটে ভুগছেন, তবুও তারা মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রাণঘাতী বোমা হামলার পাশাপাশি ধীরে ধীরে ঘাতক হয়ে উঠছে অনাহার ও অপুষ্টি। আন্তর্জাতিক মহলের দাবি, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গাজা হয়ে উঠবে এক নির্মম গণকবর।
সবার দেশ/এফও




























