বিজয় দিবসে জাতির প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান
তরুণদের রক্ষা করলেই দেশ রক্ষা পাবে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর প্রতি আবেগঘন আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের তরুণদের রক্ষা করতে পারলেই সবাই রক্ষা পাবে, রক্ষা পাবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে তারা খুব ভালো করেই বুঝে গেছে—এ অস্ত্রহীন, ভীতিহীন, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দাঁড়ানো তরুণরাই তাদের পুনরুত্থানের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। ভাষণে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, তরুণদের ভূমিকা এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পালিয়ে যাওয়া শক্তিগুলোর মধ্যে তরুণদের নিয়ে গভীর আতঙ্ক কাজ করছে। প্রতিদিনের সাধারণ চেহারার এ ছেলেমেয়েরাই তাদের কাছে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, কারণ তারা অস্ত্রহীন, ভয়মুক্ত এবং ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাবের বাইরে থেকে দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ওই শক্তিগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচন আসার আগেই এ তরুণদের সরিয়ে দেয়া, পথের সব বাধা দূর করে আবার নিজেদের রাজত্ব কায়েম করা। তিনি বলেন, যতদিন তাদের সহযোগী ও সুবিধাভোগীরা পাশে আছে, ততদিন তারা এ স্বপ্ন দেখতেই থাকবে। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে সে সমর্থন টিকিয়ে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণেই তাদের মধ্যে তাড়াহুড়ো ও অস্থিরতা।
আরও পড়ুন <<>> পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ
ভাষণে তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচনের আগেই ফিরে আসার পথ নিশ্চিত করতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। চোরাগোপ্তা হত্যা ও সহিংসতার চেষ্টা তারই একটি রূপ। তিনি বলেন, এর বাইরেও আরও কঠিন ও বিপজ্জনক পরিকল্পনা তাদের আছে, যা দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বাধ্য করে।
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে দেশের সবাইকে একসঙ্গে জোর গলায় ঘোষণা দেওয়ার—আমরা তরুণদের রক্ষা করবো। তিনি বলেন, যারা এখনও পুরনো শোষণ ও দাসত্বের মানসিকতা আঁকড়ে ধরে আছে, তাদের সে অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, একটি উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দেশবাসীকে প্রমাণ করতে হবে যে রাষ্ট্রের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জনগণের হাতেই। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, নির্বাচন পর্যন্ত সময় বাকি মাত্র দুই মাস। এ সময়টুকু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিটি দিনকে উৎসবমুখর করে তুলতে হবে। তরুণদের মনে যেহেতু ভয় নেই, তাই তারাই নির্বাচনের আগের এ দুটি মাসকে আনন্দ, শান্তি ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে পার করতে পারবে। সব ধরনের হিংসা, সংঘাত ও বিভাজন থেকে দেশকে রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভাষণের শেষাংশে প্রধান উপদেষ্টা বিজয় দিবসের চেতনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, স্বাধীনতা শুধু একটি অর্জন নয়, এটি প্রতিদিন রক্ষা করার দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনের কেন্দ্রবিন্দুতে আজ দেশের তরুণ প্রজন্ম।
সবার দেশ/কেএম




























