হাদিদের প্রয়াণ হয় না
মৃত্যুঞ্জয়ী ‘হাদি’রা জাতীয় ঐক্যের প্রতীক
শরিফ ওসমান হাদির জীবন-মৃত্যুর লড়াই এখন কেবল চিকিৎসাবিষয়ক সংকট নয়—এটি অনেকের চোখে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী লড়াইও হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ব্রেনস্টেমে গুলিবিদ্ধ এ তরুণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে সবচেয়ে অকুতোভয় কণ্ঠগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছিলেন। অনেকের ভাষায়—‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবেই কে?’—সে ঝুঁকিই নিয়েছিলেন তিনি। এখন সে যুবক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য লড়ছেন।
এ হামলা প্রকাশ্যে আসার পর দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক মহলে হাদিকে নিয়ে জাগরণ দেখা গেছে। সমর্থকদের মতে, তার কণ্ঠ বন্ধ হলেও তার জায়গায় অনেক কণ্ঠ উঠে এসেছে। অনেকেই দাবি করছেন—একজন হাদি যখন হাসপাতালের বিছানায় লড়ছেন, তখন ঘরে ঘরে নতুন হাদির উত্থান ঘটছে।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বাংলাদেশের জনগণ দেশীয় ক্ষমতাকাঠামো, বিদেশি স্বার্থ, দুর্নীতিবাজ রাজনীতি ও বাণিজ্যিক স্বার্থগোষ্ঠীর চাপে নিপীড়িত—এ অভিযোগ বহু বছরের। সে প্রেক্ষাপটে হাদির মতো প্রতিবাদী চরিত্রকে অনেকেই তুলনা করছেন তিতুমীর, সুকান্ত কিংবা নজরুলের বিদ্রোহী চেতনার সঙ্গে—তবে এটিও বলা হচ্ছে, ইতিহাসে ক্ষণজন্মাদের পথ বারবারই রুদ্ধ করা হয়েছে ষড়যন্ত্রে।
সমর্থকদের দাবি—গণঅভ্যুত্থানের পরও দেশজুড়ে রাজনৈতিক চাপ, আমলাতান্ত্রিক বিভাজন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরের বিরোধী শক্তি সক্রিয় রয়েছে। সে শক্তিই হামলা ও হত্যাচেষ্টার মদদদাতা—এমন অভিযোগও তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। হাদির ওপর হামলাকে তাই তারা নিছক অপরাধ নয়, বরং ‘স্বার্থান্বেষী মহলের রাজনৈতিক আক্রমণ’ হিসেবে দেখছেন।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা হাদির প্রত্যাশিত সুস্থতা সম্পর্কে সতর্ক। ব্রেনস্টেমে অস্ত্রোপচার জটিল, ঝুঁকি বেশি—সেটি চিকিৎসকের ভাষায় স্পষ্ট। তারপরও দেশজুড়ে অনেকে দোয়া করছেন—হাদি যেনো ‘গাজী’ হয়ে ফিরে আসেন। আর যদি তা না হয়—সমর্থকদের বক্তব্য, তার মৃত্যু ‘শহীদ হাদির’ ধারণায় রূপ নেবে এবং এতে আন্দোলন থামবে না, বরং নতুন তরঙ্গ তৈরি করবে।
আরও পড়ুন <<>> আসন্ন নির্বাচন ও নাদান মুসলিম
সমর্থক গোষ্ঠী বলছে—হাদি যদি আর না ফেরেন, তবে বাংলাদেশের ভেতরে লক্ষ হাদি গড়ে উঠবে, যারা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করবে না। তাদের ধারণা—জাতীয় ঐক্যই বহিরাগত চাপ ও আঞ্চলিক প্রভাব ঠেকাতে চূড়ান্ত শক্তি।
এ মুহূর্তে হাদির পাশাপাশি হাসনাত, সার্জিস, জারাসহ সক্রিয়, জনপ্রিয় এবং সরকার-সমালোচক কয়েকজন তরুণ বক্তা বা সংগঠকের নিরাপত্তার দাবিও জোরালো হয়েছে। মত হলো—রাষ্ট্রের উচিত ভিন্নমত থাকলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কারণ তারা দেশের ভেতর নাগরিক কণ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
শেষবিন্দুতে সমর্থকদের আহ্বান—যে মতেরই হোক, যে রাজনৈতিক অবস্থানেরই হোক, জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা জরুরি। কারণ বিভাজনের সুযোগ নিয়ে যেকোনও শক্তি দেশকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে—কিন্তু ঐক্যবদ্ধ জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাদের স্লোগান—
আমরা সবাই হবো হাদি,
জীবন গেলে যাক—
দেশের জন্য ভালো কিছু হলেই যথেষ্ট।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।




























