এম এম এ শাহজাহান গাদ্দার নয়, বীর হিসেবে স্মরণীয় থাকুন
‘আমার কাছে সব তথ্য আছে জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব বেঈমানীর রেকর্ড প্রকাশ করা হবে’- এমনটিই রেড ক্রিসেন্টের এর চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বলেছেন ছাত্র সমন্বয়ক মুনতাসির মামুন। তিনি আরও বলেছেন এখানে স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্নিয়োগ করা হচ্ছে।
মুনতাসির মামুন আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে, ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় তিনি বলছেন উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মাহবুব ঢাকায় এসে বিভিন্ন টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে জড়িত হয়েছেন এবং তিনি কর্মরত এবং প্রতিবাদরত কর্মীদেরকে থ্রেট দিচ্ছেন এ বলে যে, আমি উপদেষ্টা মাহফুজ এর ভাই আমি যা বলব তাই হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিকট অতীত এবং অতীতের ঘটনার বাইরে কোন ঘটনা নয়, যা নিত্যদিনের চলমান বাস্তবতা, তারই প্রতিধ্বনি মাত্র। এ সমস্ত অসামঞ্জস্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং স্বৈরাচারী সরকার সমূলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে আশা করা গিয়েছিলো, যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়েছেন তারা কাঙ্খিত সংস্কার, বিচার করে একটি সুস্থ নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে হস্তান্তর করবেন। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে। এমনটি হবার কথা ছিলো না, কেননা এ দুর্নীতিতে আগাগোড়া নিমজ্জিত বিগত সরকারের প্রতি আমজনতার অসন্তুষ্টিই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। তাই সেরকম কাজ যদি বর্তমান সরকার দ্বারাও সংঘটিত হয় তা কখনোই বাংলাদেশের জনতা মেনে নেবে না। কিন্তু তারপরও তো হচ্ছে, একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সাধারণ একটি কথা চলমান আছে যা ঘটে, যা রটে তা কিছু তো বটে! যদি তাই হয় তাই সত্যি হয় তাহলে তো জাতির জন্য একটি অশনি সংকেতই শুধু নয় জাতি কে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে দিনকে দিন।
যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন এবং দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তাদেরকে যেকোনও মূল্যে সকল প্রকার দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে, এ বিষয়ে কোনো আপোষ কাম্য নয়। আর বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে যে সকল ছাত্র উপদেষ্টা উপদেষ্টার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তাদেরসহ অন্য উপদেষ্টা কারোই জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কাজ করা সমীচীন নয় দুর্নীতিতো দূরের কথা।
আরও পড়ুন <<>> টেকসই রাষ্ট্র গঠনে সৎ ও সুস্থ প্রশাসনের অপরিহার্যতা
কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা সময়ের ব্যবধানে সবই উদ্ভাসিত হয়ে যাবে, তাই সে কথা স্মরনে রেখে জাতীয় বীরেরা যেন জাতীয় গাদ্দারে রূপান্তরিত না হন, সেরকম কাজ আপনাদেরকে করতে হবে। বিগত ৫৪ বছরে আমাদের দেশ এবং জাতি এটি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
সাধারণ আমজনতা, বিশাল অশিক্ষিত শ্রেণী যারা ক্ষমতা মারপ্যাঁচ তেমন কিছু বোঝেনা, তাদেরকে ঠকিয়ে এক শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ, সরকারি আমলা, এলিট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তারা নিজেরা টাকার পাহাড় গড়বেন, আর সাধারণ জনতা সব সময় কষ্ট করেই যাবেন এবং তাদের কষ্টার্জিত পয়সা কর হিসাবে রাষ্ট্রকে দিয়ে তারা নিজেরা প্রাপ্য কাঙ্ক্ষিত সেবা, সহযোগিতা পাবেন না । এটা কোন ক্রমেই হওয়া উচিত নয়।
শিক্ষিত শ্রেণীর বেকার ছাত্র জনতা তো আছেই, এছাড়াও ২৪ গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের মত মাঝ বয়সী যারা আছেন, এরকম বিশাল জনতা একথা মর্মে মর্মে টের পেয়েছেন রাষ্ট্র কিভাবে চলছে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন, তাই কেউ সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করবে এবং করে পার পেয়ে যাবে, এটি ভাবার কোন উপায় নেই।
তাই জনতা আশা করে যারা আপনারা ক্ষমতায় আছেন, আগামী কোন একদিন হয়তো আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন আপনাদের অবস্থা কি হবে! তা বিবেচনা করে জনতার আকাঙ্ক্ষিত সঠিক কাজটি করুন এবং জাতীয় বীর হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুন।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।
