Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রশ্নে ভারতের নীরবতা কেনো?

হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রশ্নে ভারতের নীরবতা কেনো?
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক মৃত্যুদণ্ঢপ্রাপ্ত আসামি খুনি হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে নোট ভারবাল পাঠিয়েছে। গত বছরের শিক্ষার্থী আন্দোলন দমনে নির্দেশনার মাধ্যমে প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) তাকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দিলে পাঁচ দিনের মাথায় এ অনুরোধ পাঠায় ঢাকা। একই মামলায় দণ্ডিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণও একই নোটে চাওয়া হয়েছে।

রায়ের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লির প্রতি কঠোর অবস্থান নেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরানো ভারতের দায়িত্ব। বিচার্য অপরাধ মানবতাবিরোধী হওয়ায় অভিযুক্তদের আশ্রয় প্রদান ‘অমিত্রসুলভ’ এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য আসে ঢাকার পক্ষ থেকে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগের পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই নিয়মিত বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। প্রত্যর্পণের প্রথম অনুরোধ পাঠানো হয় গত বছরের ডিসেম্বরে—তখন দিল্লি কেবল অনুরোধ গ্রহণ করেছে বলে জানায়। দ্বিতীয় নোট ভারবাল পাঠানোর পরও ভারতের পক্ষ থেকে এখনও কোনও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আইসিটির রায়ের পরও ভারত শুধু জানিয়েছে—তারা পরিস্থিতি লক্ষ্য করছে এবং বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা কামনা করছে; কিন্তু প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে একটি শব্দও বলা হয়নি।

দিল্লি কেনো নীরব? বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মূল দ্বিধা রাজনৈতিক। ভারত দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয় ও সহযোগিতা, ১৯৭৫-এর পর পরিবারের নিরাপত্তা, এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে তার সহযোগিতা—সবই ভারতকে এ মুহূর্তে কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। একজন পুরনো মিত্রকে মৃত্যুদণ্ডের মুখে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের রাজনীতিতেই বিতর্ক সৃষ্টি করবে।

২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি ভারত চাইলে এড়াতে পারে ‘রাজনৈতিক অপরাধ’ ধারা ব্যবহার করে। যদিও হত্যার অভিযোগ রাজনৈতিক অপরাধের আওতায় আসে না, তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সরাসরি প্রমাণ আদালতে কতটা টিকে থাকবে—সে প্রশ্নও উত্থাপন করছে অনেকেই। এমনকি ভারত চাইলে বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। আর দিল্লি অনুমতি দিলেও ভারতের আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি চলবে, যেখানে শেখ হাসিনার আইনগত লড়াইয়ের সুযোগ থাকবে।

বাংলাদেশে ভারতের নিরাপত্তা, বন্দর-অর্থনীতি, আঞ্চলিক জ্বালানি ও যোগাযোগ প্রকল্প—সবই এখন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ভারত বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নয়। তারা বরং ধীরে, নীরবে এবং সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি পরিচালনা করতে চাইছে। তবে নির্বাচনী মৌসুম ঘনিয়ে এলে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বক্তব্য রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন চাপ তৈরি করবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—দিল্লি কি পুরনো মিত্রকে ফেরত দেবে, নাকি ভূরাজনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সময়ক্ষেপণই হবে ভারতের কৌশল?

পরবর্তী মাসগুলোই হয়তো এ উত্তরের দিকনির্দেশনা দেবে।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

পাঁচ অস্ত্রসহ গ্রেফতার লিটন গাজী সম্পর্কে সব জানালো পুলিশ সুপার
আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যবস্থাপক গ্রেফতার
লালমনিরহাটে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের যাবজ্জীবন
ভোলাহাটে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দালাল চক্রের খপ্পরে
বাংলাদেশ সীমান্তে পঁচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ
সুদের টাকার জন্য নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার-১
ইমরান খান বেঁচে আছেন, দেশ ছাড়তে চাপ: পিটিআই
হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের প্লট দুর্নীতি মামলার রায় আজ
শুরু হলো বিজয়ের মাস
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত
খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে হাসপাতালে জামায়াত সেক্রেটারি
স্কুল ভর্তির লটারি ১১ ডিসেম্বর
বিডিআরকে দুর্বল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড
ছয় উপসচিবের দফতর পরিবর্তন