Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ৭ মে ২০২৫

পায়ে হেঁটে ফিরলেন ফিরোজায়

ভালোবাসার জনস্রোতে সিক্ত দেশনেত্রী

ভালোবাসার জনস্রোতে সিক্ত দেশনেত্রী
ফাইল ছবি

চার মাস পর লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবরুদ্ধ রাজনীতির দীর্ঘ শ্বাসরুদ্ধ সময়ে যেন এক আশাবাদের বাতাস বইয়ে, হাসিমুখে পা রাখলেন তিনি বাংলাদেশের মাটিতে। হাসলো দেশের মাটি, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো জনতা।

গতকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। ২০ মিনিটের পথ জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে পাড়ি দিলেন আড়াই ঘন্টায়। ফিরোজায় প্রবেশ করেন হুইলচেয়ারে নয়, স্বজনদের সহায়তায় নিজ পায়ে হেঁটে।

জনতার ঢল: বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাজপথে ভালোবাসার ছায়া

বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানীর রাজপথে শুরু হয় নেতাকর্মীদের ঢল। খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা, আবেগ ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় বিমানবন্দর থেকে গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় ও দলীয় পতাকা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জুবাইদা রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাকে স্বাগত জানান। জনস্রোতে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর থেমে থেমে এগোতে বাধ্য হয়।

সরাসরি নেতৃত্বের বার্তা: শারীরিকভাবে সুস্থ, মানসিকভাবে প্রস্তুত

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, চিকিৎসা শেষে বেগম জিয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। মানসিকভাবেও তিনি অত্যন্ত স্থিতিশীল। ১৪ ঘণ্টার জার্নি ও দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি স্বত্বেও উনি হাসিমুখে দেশে ফিরেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়া বারবার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আজ তার ফিরে আসা শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রত্যাবর্তন নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে একটি নতুন অগ্রযাত্রা।

পুত্রবধূদের প্রত্যাবর্তন: আবেগঘন পুনর্মিলনী

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন তার দুই পুত্রবধূ—তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। ১৭ বছর পর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে জনতার সামনে আবির্ভূত হন ডা. জুবাইদা। দলের নেতাকর্মীরা এ দৃশ্যকেও আবেগপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন।

বিশেষ সহায়তায় ভ্রমণ: কাতারের রাজকীয় সহযোগিতা

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানো ও দেশে ফেরানোর প্রতিটি ধাপে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে কাতারের রাজ পরিবার। বিএনপি চেয়ারপারসনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার চিকিৎসক ডা. জাহিদ জানান, কাতারের আমীরের সৌজন্যে ‘বিনাভাড়ায়’ যে রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছে, তা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বার্তা। আমরা কৃতজ্ঞ।

গণতন্ত্রের আশার আলো: দলীয় নেতাদের বক্তব্য

বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার বেগম জিয়ার আজকের ফিরে আসা আমাদের জন্য, জাতির জন্য এক আনন্দঘন মুহূর্ত। গণতন্ত্র উত্তরণের এ সন্ধিক্ষণে তার উপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নেতৃত্ব দেবেন, মানুষ অধিকার ফিরে পাবে।

দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও একই সুরে বলছেন—এ প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেত্রীর নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রেরও প্রত্যাবর্তন।

শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয়: সেনা-পুলিশ-র‌্যাবের ত্রিস্তরীয় নজরদারি

সকাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা বলয়ে সাজানো হয় খালেদা জিয়ার আগমন পথ। বিমানবন্দর, বনানী, খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, নৌ সদর ও গুলশানে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়। ছিল ছাদে ছাদে স্নাইপার অবস্থান, পথঘাটে টহলরত সেনা যান।

পরিবার ও দলীয় নেতাদের অভ্যর্থনা

গুলশানে ফিরোজায় পৌঁছে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও পরিবারের সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

চিকিৎসা ও বিদেশ অবস্থান: চার মাসের চিত্র

গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে কাতারের আমীরের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নিয়ে যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। সেখান থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে তিনি মাকে পৌঁছে দেন লন্ডন ক্লিনিকে। ১৭ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। এরপর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিন নাতনি—জায়মা, জাফিয়া ও জাহিয়া—যারা চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন দাদুকে।

রাজনীতির মাঠে বার্তা: নেতৃত্ব শূন্যতা নেই

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ১৯৮১ সালে যেমন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদতের পর বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো। ১/১১-তেও তাকে নেতৃত্বশূন্য করতে পারেনি শত্রুরা। এবারও কেউ যেনো বিভ্রান্ত না হন, নেতৃত্বের কোনও শূন্যতা বিএনপিতে নেই। প্রয়োজন হলে বেগম জিয়া আবার নেতৃত্ব দেবেন, তারেক রহমান আরও সুদৃঢ় নেতৃত্ব দেবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনবারের নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়ক বেগম খালেদা জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তন কেবল তার পারিবারিক বা ব্যক্তিগত পুনর্মিলনের মুহূর্ত নয়; এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, এক রকম প্রতিরোধের প্রতীক এবং গণতন্ত্রপন্থী জনতার দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রতিফলন। তিনি হেঁটে ফিরোজায় প্রবেশ করলেন, কিন্তু তার এ পদচারণ যেনো কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো লকড ডেমোক্রেসির অনেকগুলো দরজা।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা চালুর উদ্যোগ
ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনে তালা
তালেবান শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভারতে গোপন সফর!
তেল-গ্যাসের দাম কমছে বিশ্ববাজারে
জবি শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনেও রাজপথে
বিএনপি নেতা পুলিশে দিলেন ছেলেকে
১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: পাক প্রধানমন্ত্রী
কুরবানির পশুর হাট রাজধানীর যেসব স্থানে
উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর বোতল নিক্ষেপ
উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় তীব্র নিন্দা হাসনাতের
‘উপদেষ্টা মাহফুজের সঙ্গে যা হয়েছে, এর জন্য আপনাদের প্রতি ধিক্কার’
উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল নিক্ষেপ ‘হঠকারী আচরণ’
পরীক্ষা দিতে গিয়ে সন্তানের জন্ম